নওগাঁয় ভিয়েতনামের ড্রাগন ফল
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় কৃষি ফসলের পাশাপাশি চাষ হচ্ছে ভিয়েতনামের ড্রাগন ফল। ফলটি অত্যন্ত লাভজনক, মুখরোচক, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের উপকারী বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।
এই ফলের সফল উদ্যেক্তা উপজেলার গুয়াতা গ্রামের উদ্যানতত্ত্ববিদ গোলাম রব্বানি (৪৫)। ড্রাগন ফল চাষে জেলার একমাত্র দৃষ্টান্ত এ গোলাম রব্বানি।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার একডালা ইউনিয়নের গুয়াতা গ্রামের গোলাম রব্বানি নিজ উদ্যোগে ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শক্রমে তৈরি করেছেন ভিয়েতনামের ড্রাগন ফলের বাগান। তিনি প্রায় দুই বছর আগে ৬০ শতাংশ জমিতে এই ফলের বাগান তৈরি করেন। গোলাম রব্বানি কৃষি বিভাগের একজন উদ্যানতত্ত্ববিদ হওয়ার সুবাদে এ ফল চাষের ব্যাপারে তিনি জানেন। তিনি বর্তমানে নাটোরে উদ্যানতত্ত্ব বিভাগে কর্মরত আছেন।
বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ড্রাগন ফলের গাছে শোভা পাচ্ছে ভিনদেশি এই ফল। ফলটি পাকার পর অত্যন্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়। এটি ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তার বাগানে বর্তমানে ১২০টি ড্রাগন ফলের গাছ রয়েছে। সব গাছেই ফল এসেছে। তবে অন্যান্য ফলের চেয়ে ড্রাগন ফলের মূল্য অনেক বেশি। গত বছর তিনি প্রতি কেজি ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়।
উদ্যানতত্ত্ববিদ গোলাম রব্বানি জানান, ‘এটি অত্যন্ত লাভজনক একটি ফল। আমি দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করার সুবাদে অনেক লোককে এই লাভজনক ফলের বাগান করার জন্য উৎসাহিত করেছি। তারা এখন এই ড্রাগন ফলের বাগানকে অনেক প্রসারিত করেছেন। তাদের কাছে এই ড্রাগন ফল এখন অত্যন্ত লাভজনক একটি ফসলে পরিণত হয়েছে। আমার এলাকার মানুষের কাছে এই সংবাদটি পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য আমি নিজ উদ্যোগে বাড়িতে তৈরি করেছি এই ফলের বাগান। ড্রাগন ফলের গাছ মূলত কাণ্ড থেকে হয়। এই গাছের কাণ্ড কেটে লাগালে তা থেকে গাছ হয়। এটি চাষ করার জন্য অতিরিক্ত কোনো রাসায়রিক সার ও ওষুধের প্রয়োজন হয় না। শুধু জৈব সারই এর জন্য যথেষ্ট। এটি একটি ভেষজগুণ সম্পন্ন ফল।’
গোলাম রব্বানি জানান, বর্তমানে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় এই ফল অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রধান খাবার হিসেবে করে নিয়েছে। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া এই ফল চাষের জন্য অনুকূল। একটি ড্রাগন ফলের গাছ ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে এবং বছরে ছয় মাস ফল দেয়। সাধারণত মে মাসে গাছে ফুল আসে এবং ফুল আসার ৩৫ দিনের মধ্যেই এই ফল খাওয়ার উপযোগী হয়। এই ফল বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভব।
উদ্যানতত্ত্ববিদ আরো জানান, বর্তমানে বিভিন্ন উপজেলার লোকেরা বর্তমানে এই ড্রাগন ফলের বাগান তৈরির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। কারণ কম পুঁজি প্রয়োগ করে অধিক লাভ করা যায় এই ফসল থেকে।
এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, গোলাম রব্বানির এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তিনি এলাকার মানুষের মধ্যে এ ফলের চাষ সম্পর্কে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এই বাগানটি তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক তাঁর বাগানের যাবতীয় খোঁজখবর রাখছি এবং পরামর্শ দিয়ে আসছি। আমরা চাই তার দেখাদেখি উপজেলার আরো অনেকই এই লাভজনক ফলের বাগান তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করুক। এই লাভজনক বাগান তৈরি করার জন্য আমরা মানুষকে সার্বিক সহযোগিতা করব।’