রাসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিয়ে জটিলতা, উত্তেজনা

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) নির্বাচিত মেয়রকে মামলা জটিলতায় বরখাস্তের পর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বভার গ্রহণ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে টানাপড়েন। কে মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন, এ নিয়ে রীতিমতো কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় গড়িয়েছে, যেকোনো সময় এ নিয়ে নগর ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এমন আশঙ্কায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগর ভবনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
সূত্র মতে, রাসিকের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকলেও গত সরকারবিরোধী আন্দোলনের পর থেকে পুলিশের করা একের পর এক মামলায় তাঁকে আসামি করা হতে থাকে। পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যা মামলাসহ নাশকতা ও গাড়ি পোড়ানোর মতো ১৭টি মামলা দায়ের হয় তাঁর বিরুদ্ধে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এই অবস্থায় গত ৭ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে মেয়রের পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এরপর থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল হামিদ সরকার টেকন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। তাঁরা দুজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তবে শেষ পর্যন্ত গত সোমবার সকালে নগর ভবনে ছড়িয়ে পড়ে কামরুজ্জামান কামরুই হচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে কামরুকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।
এমন দাবি করে কামরুজ্জামান কামরু গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার সকালে তিনি রাজশাহীতে ফিরে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।
কিন্তু আজ মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিয়ে নাটকীয় মোড় নেয়। আজ মঙ্গলবার সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর প্যানেল মেয়র নুরুন্নাহার বেগম ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে তাঁর নিজস্ব প্যাডে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। এরপর ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিয়ে সৃষ্টি হয় জটিলতা।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো প্যানেল মেয়র-৩ ও সংরক্ষিত ৯ নম্বর আসনের কাউন্সিলর মোসা. নুরুন্নাহার বেগমের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘গত ৭ মে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র বিভিন্ন ফৌজদারি মামলার কারণে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়ায় তিনি অফিস নথিতে সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯ এর ১২ ধারা অনুসারে আমাকে মেয়রের দায়িত্ব অর্পণ করেন। যেহেতু প্যানেল মেয়র-১ কারাগারে আছেন এবং প্যানেল মেয়র-২ এর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি আমাকে মেয়রের দায়িত্ব প্রদান করা হয়নি। আমি মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণে আগ্রহী।’
চিঠিতে সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯ এর ১২ ধারা অনুসারে নুরুন্নাহার বেগমকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝে দেওয়ার নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো এ চিঠির অনুলিপি রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকেও দেওয়া হয়েছে।
রাসিক সূত্র জানায়, আজ মঙ্গলবার নগর ভবনে ২০১৫-১৬ বছরের প্রি-বাজেট পর্যালোচনা সভা ছিল। সভার পরই ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করা হবে বলে প্রচার ছড়িয়ে পড়ে। তবে কে মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন, তা নিয়ে আওয়ামী লীগপন্থী কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু ও বিএনপিপন্থি কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-৩ নুরুন্নাহার বেগমের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে দুপুর ১টার দিকে নগর ভবনের সামনে বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই প্রি-বাজেট পর্যালোচনা সভা না করেই কাউন্সিলররা যে যাঁর মতো নগর ভবন ত্যাগ করেন।
সিটি করপোরেশনের ৪০ জন কাউন্সিলরের মধ্যে মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন কাউন্সিলর নগর ভবনে উপস্থিত থাকায় এবং সভার কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় প্রি-বাজেট পর্যালোচনা সভা হয়নি বলে জানিয়েছেন রাসিকের একজন কর্মকর্তা।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু বলেন, ‘আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পেতে ইচ্ছুক। তবে এখনো এ ধরনের কোনো চিঠি মন্ত্রণালয় বা রাসিক থেকে পাইনি। চিঠি পেলেই দায়িত্ব নেব।’
যোগাযোগ করা হলে প্যানেল মেয়র-৩ নুরুন্নাহার বেগম বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী আমিই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পাব। তারপরও মেয়র বুলবুল সাহেব দায়িত্বভার দিতে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে দায়িত্বভার দিচ্ছেন না। এ কারণে আমাকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বভার বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানার জন্য রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আজাহার আলীর সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে নগর ভবনে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনও তিনি ধরেননি।
রাসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আমিরুল করিম বুলু বলেন, ‘প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একটি সভায় বাইরে আছেন। তবে শুনেছি প্যানেল মেয়র নুরুন্নাহার বেগম দায়িত্ব নিতে চিঠি দিয়েছেন।’