তিস্তার পানি : বোরোর আবাদ নিয়ে শঙ্কায় কৃষক
আগামী রবি ও বোরো মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী তিস্তা নদীর পানি পাবে কি না তা নিয়ে চরম সংশয়ের মধ্যে পড়েছেন কৃষকরা। এ অবস্থায় কৃষি জমির পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃষকরা বলেছেন, সেচের পানি না পেলে সেচ পাম্প বসিয়ে আবাদে তাঁদের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে।
এখন পর্যন্ত তিস্তা নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহে ভারত-বাংলাদেশ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। প্রতি বছরই প্রকল্পের আওতাভুক্ত অনেক জমিতেই ভরা মৌসুমে পানি দেওয়া সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় কৃষকদের বিকল্প ব্যবস্থায় জমিতে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চলের ছয় জেলায় প্রায় সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প গড়ে ওঠে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ ১৮ বছরেও সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। পানির প্রবাহ না থাকায় অনেক সেচ খাল মজে যেতে শুরু করেছে।
নীলফামারী, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, রংপুর, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলার ৩৫টি উপজেলায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে সেচযোগ্য জমির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর জমি। কিন্তু ভারত এক তরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সেচযোগ্য জমির পরিমাণ কমিয়ে আনা হয় ৬০ হাজার হেক্টরে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সেই লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় আবারো সেচযোগ্য জমির পরিমাণ কমিয়ে আনা হয় ১০ হাজার হেক্টরে। এরপরও পানি না পেয়ে কৃষকরা তাঁদের ফসল ফলানোর স্বার্থে বসিয়েছেন সেচ পাম্প।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তাদের রেকর্ড অনুযায়ী নীলফামারীর ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানির গড় প্রবাহ ছিল পাঁচ হাজার ৬৬৮ কিউসেক। আর চলতি বছর জানুয়ারির শেষের দিকে পানির প্রবাহ নেমে আসে এক হাজার ১২৫ কিউসেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ায় এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গজলডোবা ব্যারাজের মাধ্যমে ভারত একতরফাভাবে তিস্তা নদীর পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় তিস্তা নদীর বুক এখন ধু ধু বালুর চর। ক্ষীণধারায় আসা চোয়ানো পানির পরিমাণ মাত্র ৫০০ কিউসেক। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ না হলে প্রকল্পের অধীন জমিতে ঠিকমতো পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। এমনকি পুরো সেচ কার্যক্রম মুখথুবড়ে পড়তে পারে।
নীলফামারী সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কেরামত আলী জানান, সেচের জন্য পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হওয়া দরকার। তা না হলে কৃষকরা সমস্যায় পড়বেন।