বাম্পার ফলন, জবর দুঃখ
মানিকগঞ্জে এবার কাঁচামরিচের ফলন ভালো হয়েছে। বাম্পার ফলনে খুশি হওয়ার কথা কৃষকদের। কিন্তু লোকসানের মুখে পড়ে পুঁজি হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন তাঁরা। বাম্পার ফলন তাঁদের বাম্পার দুঃখ নিয়ে এসেছে।
কৃষকরা জানালেন, এখনই কাঁচামরিচের দাম না বাড়লে পথে বসতে হবে তাঁদের। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারি উদ্যোগের দাবি জানিয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, মানিকগঞ্জ জেলায় এ বছর পাঁচ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে কাঁচামরিচের আবাদ হয়েছে, যা গতবারের চেয়ে ১০০ হেক্টর বেশি। জেলার অধিকাংশ বাজারে প্রতিদিন কৃষকরা তাঁদের মরিচ পাইকারি বিক্রি করছেন। সব মিলিয়ে জেলা থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শতাধিক ট্রাকে করে মরিচ যাচ্ছে, প্রতিদিন যার পরিমাণ প্রায় ২৫০ টন।urgentPhoto
বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী চার টাকা কেজি দরে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ ওঠা তো দূরের কথা, গাছ থেকে মরিচ তোলা ও হাটে আনার পরিবহন খরচও মিলছে না কৃষকদের। অথচ এই জেলার মরিচ দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচের কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয়।
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া, বুতুনি, দুবুলিয়া, তাড়াইল, ডাকিজোরা, ইন্তাজগঞ্জ, মহাদেবপুরসহ আরো কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে দিগন্তজোড়া শুধু কাঁচামরিচের ক্ষেত।
দুবুলিয়া গ্রামের কৃষক দলিল উদ্দিন জানান, তিনি এবার সাড়ে চার বিঘা জমিতে কাঁচামরিচের আবাদ করেছেন। মরিচের ফলনও ভালো। কিন্তু দাম একেবারেই নেই। মানুষ দিয়ে ক্ষেত থেকে প্রতি কেজি মরিচ তুলতে খরচ হয় তিন টাকা। আর এক মণ মরিচ বাজারে নিতে পরিবহন খরচ পড়ে ২৫ টাকার মতো। অথচ সেই মরিচ হাটে নিয়ে পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে হয় চার টাকা কেজিদরে। এতে লাভ তো দূরের কথা, চালানও ওঠে না।
একই এলাকার আরেক কৃষক নুরুল ইসলাম বললেন, ‘অনেক আশা নিয়ে দেড় বিঘা জমিতে মরিচ বুনেছিলাম। বাম্পার ফলনও হয়েছে। তবে একেবারেই দাম না থাকায় ভরা মৌসুমেও ক্ষেত থেকে মরিচ তোলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে সবাই। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে মরিচের আবাদ হয়তো আর করা যাবে না।’
কিষানি আলেয়া বেগম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বর্গাজমিতে ১৪ হাজার টাকা খরচ করে মরিচ চাষ করেছি। কিন্তু দাম শুইনা আমাগো এখন মাথায় হাত। মরিচের কোনো দাম নাই। এখন কীভাবে খরচ উঠবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন।’
এলাকার নারী শ্রমিক মায়া রানী, সালেহা বেগম, পারভিন ও বুলি আক্তার বলেন, কৃষকরা মরিচের দাম ভালো পেলে তারাও বেশি মজুরি পেতেন। এক কেজি মরিচ ক্ষেত থেকে তুলতে তাদেরই দিতে হয় তিন টাকা। ওই মরিচ বিক্রি জয় চার টাকায়। তাহলে কৃষক বাঁচবে কীভাবে।
এদিকে মানিকগঞ্জের মরিচ বেচাকেনার বিখ্যাত হাট বরঙ্গাইলে সকাল ৮টা থেকে রাত অবধি মরিচ নিয়েই যত আয়োজন। পাইকাররা এখান থেকে সস্তায় মরিচ কিনে ঢাকার কারওরান বাজার, বকশিবাজার, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। এ ছাড়া উন্নতমানের মরিচগুলো আলাদা করে প্যাকেটে করে সৌদি আরব, কুয়েত, জর্ডান, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
হাটের মরিচ ব্যবসায়ী সুনীল সরকার জানালেন, এবার মরিচের আবাদ বেশি হওয়ায় কৃষক দাম পাচ্ছে না। আর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক বেশি হওয়ায় তাঁরাও লাভের মুখ দেখছেন না।
আরেক ব্যবসায়ী ফরমান শেখ বলেন, ‘মানিকগঞ্জের মরিচ অনেকদিন ধরেই বিদেশে রপ্তানি করছি। এখান থেকে কার্টন ভর্তি করে মরিচ বিদেশে রপ্তানি হয়। দাম বেশি থাকলে আমাদেরও ভালো, কৃষকেরও লাভ। কিন্তু এবার দাম কম থাকায় কৃষকের পাশাপাশি আমরাও খুব একটা লাভের মুখ দেখছি না।’
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আলীমুজ্জামান মিয়া জানান, এ জেলায় ফলন ভালো হওয়ায় এবার প্রায় আট হাজার মেট্রিক টন মরিচ উৎপাদন হবে। বৃষ্টির পাশাপাশি আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের ফলন খুব ভালো হয়েছে বলে মনে করেন জেলার এই কৃষি কর্মকর্তা।