ওপর দিয়ে গালি, ভেতর দিয়ে দালালি : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো সরকারের সাহস হয়নি স্থল সীমান্তচুক্তি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করার। তারা ওপরে ওপরে ভারতের বিরোধিতা করে গালাগাল করলেও ভেতরে ভেতরে ভারতের দালালি করেছে।
আজ শনিবার গাজীপুরের সালনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।urgentPhoto
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ, আর আন্দোলন, জাতিসংঘে দৌড়ানো, এখানে দৌড়ানো। এইগুলো আগডুম-বাগডুম বহু কাজ তারা করেছে। কিন্তু আসল কাজের কাজ তারা কিছুই করেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আসলেই বলবে, দেশ ভারতকে দিয়ে দিচ্ছে, ভারতের দালাল, ভারতের দালাল। আমরা কিন্তু সারা জীবন ভারতের দালাল শুনতে শুনতে শেষ। কিন্তু ভারতের দালালি যারা করে নাই তারা কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের কোনো অধিকার আদায় করে আনতে পারে নাই। আপনারা দেখবেন ওপর দিয়ে গালি দিয়েছে আর ভেতর দিয়ে ভারতের দালালি তারাই করেছে। পা ধরে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। আমরা তা করিনি।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী কৃষি ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের নানা পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে কৃষির উন্নয়নে গবেষণা অব্যাহত রাখতে গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানান। আর এ জন্য সরকারের যা যা সহযোগিতা দরকার, তা করারও প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, ইলা মিত্র হল, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, বেগম সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়ামসহ ১৩টি স্থাপনা উদ্বোধন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সুফিয়া কামাল অডিটরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, সিন্ডিকেট সদস্য ও সংসদ সদস্য কৃষিবিদ আবদুল মান্নান, কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিবন্ধক অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক।
আ. লীগের কারণে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষিবান্ধব নীতির ফলেই বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রেকর্ড তিন কোটি ৮৩ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। খাদ্য ঘাটতির দেশ আজ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়, বরং বাংলাদেশ আজ খাদ্য রপ্তানিকারক দেশ। তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা সারের দাম তিন দফা কমিয়েছি। কৃষকের জন্য মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করেছি। সার, সেচ ও ডিজেলসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণে ৪৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। ডিজেলের ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রতিবছর ১৫ হাজার কোটি টাকা কৃষিঋণ এবং কৃষি গবেষণায় জোর দিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘জাতির পিতার দূরদৃষ্টির ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতির দেশকে ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত করেছিলাম।
এ জন্য জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা আমাদের সেরেস পদকে ভূষিত করে। আমাদের আগে বিএনপি সরকার দাবিতে আন্দোলনরত ১৮ জন কৃষককে হত্যা করেছিল। ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব নিয়ে আমরা কৃষকদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সার সরবরাহ করি।’
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও কৃষিবিজ্ঞানীদের উদ্দেশে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা গবেষণার মাধ্যমে উল্লেখ্যযোগ্যসংখ্যক জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন এবং সেগুলোর সম্প্রসারণ করে দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানে উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রাখছেন। এসবের মধ্যে মঙ্গাপীড়িত এলাকার কৃষকদের কাছে বঙ্গবন্ধু ধান নামে পরিচিত বিইউ ধান-১ বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য।’
‘গোলামির চুক্তি’ ছিল অপপ্রচার
ভারতের সংসদে সদ্য পাস হওয়া স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “৭২ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির পর ’৭৪ সালে ভারত সফরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে স্থল সীমানা চুক্তি করেন। এই চুক্তির পর বাংরাদেশ সরকার সংবিধান সংশোধন করে অনুমোদন করলেও ভারত সরকার অনুমোদন করেনি। দীর্ঘ ৪০ বছর অতিবাহিত হয়। জাতির পিতা শাহাদাতবরণের পর পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে কোনো কথা বলেনি। বঙ্গবন্ধু এ ব্যাপারে যতটুকু করে গেছেন পরবর্তীতে আমরা ক্ষমতায় এসে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিই। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করি। আলোচনা মোতাবেক আমাদের দেশের মানচিত্র অনুযায়ী সীমারেখা চিহ্নিত করতে শুরু করি। মাত্র সাড়ে ছয় কিলোমিটার বাদে বাকিটুকুর কাজ আমরা করে ফেলেছিলাম। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে আবার উদ্যোগ নিই। কারণ বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এ দেশের একটি নির্দিষ্ট ম্যাপ ও সীমারেখা চিহ্নিত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ২০১০ সালে ভারত সফরে গিয়ে আমরা যৌথ ঘোষণা দিই। সেই যৌথ ঘোষণায় আমরা আমাদের স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হই। ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন বাংলাদেশে সফরে আসেন তখন আমরা স্থলসীমানা প্রটোকল সই করি। এর ফলে সাড়ে ছয় কিলোমিটার সমস্যার সমাধান হয় এবং ভারত থেকে ফেনী এলাকায় বেশ কিছু জায়গা পাই।”
‘যখন মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হলো, সেই চুক্তিকে ৪০ বছর পর পর্যন্ত বলা হয়েছে গোলামির চুক্তি। ৪০ বছর পর আজকে উপলব্ধি করেছে এটা ছিল অপপ্রচার। ওই চুক্তির ফলে আজ বাংলাদেশ যে লাভবান সেটা কিন্তু প্রমাণিত হয়েছে। কূটনীতির ক্ষেত্রে এটা আমাদের রাজনীতির বড় সাফল্য।’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী এ চুক্তি পাস করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীসহ সকল প্রদেশ, রাজনৈতিক দল, দলের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।