রাজশাহীতে বনসাই প্রদর্শনী শুরু, চার লাখ টাকার ‘লাইকড়’
রাজশাহীতে চারদিনের বনসাই প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরীর মণিবাজার চত্বরে প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. নূরুল হোসেন চৌধুরী ও সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বনসাই সোসাইটির সভাপতি সৈয়দ মাহফুজ-ই-তৌহিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার মুর্শেদ।
রাজশাহী বনসাই সোসাইটির উদ্যোগে ১৭তম এ আয়োজনে ৬৫ জন শিল্পীর ২৪০টি দুর্লভ বনসাই স্থান পেয়েছে।
প্রদর্শনীতে উল্লেখযোগ্য গাছের মধ্যে রয়েছে দেশি বট, পাইকর, লাইকড়, শ্যাওড়া, ঘূর্ণিবিচি, তমাল তরু, বৈচি, জিলাপী, তেঁতুল, কামিনী। ফাইকাস প্রজাতির মধ্যে রয়েছে বেনজামিনা, রেচুসা, রামফি, লংআইল্যান্ড, গোল্ডেন ভাইরেন্স। এ ছাড়া বাগানবিলাস, বাওবাব, জেড, চায়না বট, থাইচেরি, কদবেল, রঙ্গনসহ আরো অনেক প্রজাতির গাছ রয়েছে প্রদর্শনীতে।
এ ছাড়া প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম গাছ বাওবাব বৃক্ষ। যা মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার জঙ্গলে পাওয়া যায়।
রাজশাহী বনসাই সোসাইটির নির্বাহী কর্মকর্তা নওরোজ আলী মহিম বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার জঙ্গলে পাওয়া যায় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বাওবাব গাছটি রাজশাহী বনসাই সোসাইটির সংগ্রহে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখানে দেশের বিরল প্রজাতির এমন অনেক গাছ আছে, যা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা সেই গাছগুলোকে দর্শনার্থীদের কাছে তুলে ধরেছি। বনসাইয়ের আনন্দ সেখানেই, যা বৃক্ষের আকৃতিকে ছোট ফ্রেমে বেঁধে তা সবাইকে আনন্দ দেয়। একটি বড় আকৃতির বৃক্ষকে যেমন দেখায়, বনসাইয়ের একটি বৃক্ষ সেই আকারে দেখা যায়।’ তিনি জানান, এবারের বনসাই প্রদর্শনীতে ২৪০টি গাছ প্রদর্শন করা হয়েছে। তবে রাজশাহী বনসাই সোসাইটির সদস্যদের সংগ্রহে রয়েছে প্রায় ৫০০টি গাছ।
প্রদর্শনীতে বনসাই বৃক্ষের মূল্য সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা। আর একটি লাইকড় গাছের মূল্য রয়েছে চার লাখ টাকা। এই লাইকড় বৃক্ষটি অন্যান্য বৃক্ষের চেয়ে অনেক পুরোনো এবং এর গঠন সবচেয়ে আলাদা।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে। আগামী রোববার প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠিত হবে। রানার, বাংলা ক্যাট ও শিক্ষা স্কুল অ্যান্ড কলেজ এ প্রদর্শনীর স্পনসর করছে। উদ্বোধন শেষে অতিথিরা বনসাই পরিদর্শন করেন।
বনসাই প্রদর্শনীতে বৃক্ষপ্রেমীদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
বনসাই প্রদর্শনীতে আসা রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী তারানা জান্নাত বলেন, ‘কলেজ পাশে হওয়ায় বনসাই মেলায় ঘুরতে এলাম। এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। শৈল্পিক কর্মের মধ্য দিয়ে বড় আকারের গাছগুলো যেভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি তা সত্যিই আশ্চর্যজনক।’ রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী আবুল হায়াত বলেন, গাছপ্রেমীদের কাছে এ এক অন্য জগৎ। বাসায় যারা বাগান করেন, বনসাই তাদের জন্য একটি শিল্প। খুব ভালো লাগে যখন অনেক পুরোনো একটি বড় গাছকে নতুন একটি ছোট গাছে রূপান্তর হতে দেখা যায়। যারা বনসাই করে তারা বলতে পারে এই গাছটি আমার নিজ হাতে তৈরি।