চলনবিলে দেশি মাছ নিধন করে হাইব্রিড মাছ চাষ
চলনবিল অঞ্চলে দেশি জাতের মাছ নিধন করে চাষ হচ্ছে হাইব্রিড প্রজাতির মাছ। ফলে এ অঞ্চল থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে দেশি জাতের মাছ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এভাবে দেশি মাছ নিধন চলতে থাকলে এক দশকের মধ্যেই এ অঞ্চল থেকে দেশি জাতের মাছ হারিয়ে যাবে।
সরেজমিনে জানা গেছে, চলনবিল অঞ্চলের আট উপজেলার পুকুর, দিঘি, ডোবা-নালা এমনকি নদীতেও বাণিজ্যিকভাবে মাছের চাষ করা হচ্ছে। হাইব্রিড জাতের মাছ চাষ করে কিছু মানুষ অধিক মুনাফা অর্জন করলেও দেশি জাতের মাছের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। প্রকাশ্যে অবাধে দেশি জাতের মাছ নিধন করা হলেও প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। কয়েক প্রজাতির দেশি মাছকে ‘রাক্ষুসে’ মাছ আখ্যা দিয়ে নিধন করা হচ্ছে। চাষিদের কাছে রাক্ষুসে মাছের তালিকায় রয়েছে বোয়াল, শৈল, গজার, চিতল ও টাকি। পুকুরে হাইব্রিড মাছের পোনা ছাড়ার আগে বিষ, সার, চুন, গ্যাস ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ দিয়ে এসব মাছ হত্যা করা হচ্ছে। মাছের পোনা ছাড়ার কিছুদিন পর আগাছা দমনের নামে ওই পুকুর বা জলাশয়গুলোতে বিশেষ ধরনের ওষুধ দিয়ে নিধন করা হচ্ছে বাইলা, দেশি ছোট চিংড়ি, চান্দা খলশেসহ দেশি জাতের সুস্বাদু ছোট মাছ।
এ বিষয়ে কথা হয় সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানা সদরের বিশিষ্ট মৎস্য চাষি রঞ্জিত চন্দ্র হালদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা পুকুরে মাছ চাষ করি। মাছ চাষে অল্প সময়ে অধিক আয় করতে হলে জলাশয়ে সার-বিষ প্রয়োগ করতে হয়। এ ছাড়া কোনো জলাশয়ে হাইব্রিড জাতের মাছ চাষ করতে হলে সে জলাশয় থেকে অবশ্যই রাক্ষুসে মাছ নামে খ্যাত শৈল, বোয়াল, গজার, চিতল ও টাকি নিধন করতে হবে। নইলে হাইব্রিড জাতের মাছ চাষ করা সম্ভব নয়। জলাশয় থেকে দেশি জাতের ছোট চিংড়ি, বাইলা, চান্দা, খলশে মাছও অপসারণ করতে হবে।’
রঞ্জিত চন্দ্র হালদার বলেন, ‘এভাবে দেশি মাছ নিধন করে হাইব্রিড মাছের চাষ চলতে থাকলে পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে চলনবিল থেকে দেশি মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’
তাড়াশ উপজেলার বারুহাস গ্রামের মাছচাষি অনীল কুণ্ড হালদার জানান, চলন বিল অঞ্চলে এক সময় সবই ছিল দেশি জাতের মাছ। এখন সবাই হাইব্রিডের দিকে ঝুকছে। কারণ এতে কম সময়ে বেশি লাভ পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশি মাছের প্রজনন বাড়াতে হলে সব ধরনের চাষাবাদে কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বিরত থাকতে হবে সার-বিষ প্রয়োগ থেকে। তবেই চলনবিল অঞ্চলে আবারো পর্যাপ্ত পরিমাণে দেখা মিলবে দেশি জাতের চিংড়ি, বাইলা, চান্দা, খলশে, টাকি, শৈল, বোয়াল, চিতল ও গজার মাছের।
তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান জানান, সারা বিশ্বে মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত চলনবিলের সুনাম রয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে চলনবিল থেকে দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি চলনবিলে বিরল প্রজাতির মাছ দেখা যাচ্ছে। মা মাছ, রেনু পোনা নিধনকারীদের বিরুদ্ধে সরকারিভাবে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজাও দিয়েছে।
হাফিজুর রহমান বলেন, ‘দেশি প্রজাতির মাছ এখন শুধু হাওর, বিল, নদীতে নয় পুকুর জলাশয়েও চাষ করা হচ্ছে।’ সরকারিভাবে দেশি প্রজাতির মাছ চাষ করার ব্যাপারে বিভিন্ন সময় সেমিনার করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।