জলির এক মাসের মধ্যে কী এমন হলো…
‘জলির মৃতদেহ উদ্ধারের সময় আমি দেশের বাহিরে ছিলাম। যাওয়ার এক মাস আগে সোয়াদকে (আকতার জাহানের ছেলে) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সোয়াদ গণিতে একটু দুর্বল ছিল, কীভাবে সে ভালো করবে তা নিয়ে জলির চিন্তার শেষ ছিল না। যার বাচ্চাকে নিয়ে এত উদ্বিগ্নতা, সে এ ধরনের একটা...।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলির স্মরণে আয়োজিত শোকসভায় তাঁর বড় বোন ইসরাত জাহান এসব কথা বলেন।
শোকসভায় জলির মৃত্যুর বিচার চেয়ে ছোট ভাই কামরুল হাসান বলেন, ‘আমার বোন মারা গেছে, তাঁকে আর ফিরে পাওয়া সম্ভব না। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর কারণ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সবার সামনে উঠে আসবে- এটাই আমি আশা করছি।’
গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের নিজ কক্ষ থেকে আকতার জাহানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় সেখান থেকে একটি ‘সুইসাইড নোট’ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আজ শিক্ষক আকতার জাহানের শোকসভায় সভাপতিত্ব করেন বিভাগের সভাপতি ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে। সভা সঞ্চালনা করেন সহকারী অধ্যাপক শাতিল সিরাজ।
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় বিভাগের সামনে থেকে একটি শোকর্যালি বের করা হয়। র্যালি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ পুনরায় সেখানে ফিরে আসে। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কালোব্যাজ ধারণ করেন।
শোকসভায় আকতার জাহানের সহকর্মী ও সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন বলেন, ‘প্রত্যেকটা আত্মহত্যাই হত্যাকাণ্ড। প্রত্যেকটা হত্যাকাণ্ডই একেকটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। মানুষ কী ধরনের পরিস্থিতিতে আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নেয়? জলির মৃত্যু আমাকে বলে গেছে, সম্পূর্ণ একা না হয়ে পড়লে মানুষ মৃত্যুকে নিজের হাতে বরণ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। জলি কেন এত একা হয়ে পড়েছিল? তাঁর এ মৃত্যুর পেছনে আমাদের দায় আছে। আমরা কোনোভাবেই এ দায় এড়াতে পারি না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ্ আজম বলেন, ‘আমরা কেন আকতার জাহানের অভিমান বুঝতে পারিনি, এটা আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতা। এ মৃত্যুতে যদি কোনো প্ররোচনাকারী থাকে তাঁর বিচার চাই। তিনি শুধু আকতার জাহানকে হত্যা করেননি, তাঁর স্বপ্নকে হত্যা করেছেন।’
সভাপতির বক্তব্যে ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, ‘আমরা কখনো ভাবতেই পারিনি জলি আপা এ রকম একটা সিদ্ধান্ত নেবেন। রাষ্ট্র আমাদের এ হত্যার বিচার করার ক্ষমতা দেয়নি। শুধু আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করতে পারি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
সভায় আরো বক্তব্য দেন ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া, মহিলা পরিষদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাধুরী রায় চৌধুরী প্রমুখ।
সভায় আকতার জাহান জলিকে নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।