শেরপুরে ‘লালন ধ্যানকেন্দ্র’ উচ্ছেদ
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী রাজাপাহাড়ে বন বিভাগের সংরক্ষিত এলাকায় ‘লালন বিশ্বসংঘ আন্তর্জাতিক ধ্যানকেন্দ্র’ নামে গড়ে ওঠা ‘অভয়াশ্রম’ উচ্ছেদ করেছে বন বিভাগের লোকজন।
আজ শনিবার সকালে বন বিভাগের লোকজন এই উচ্ছেদ অভিযান চালায়।
কর্ণঝোড়া ফরেস্ট বিট কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কথিত লালন অভয়াশ্রমের নামে বন বিভাগের জমি জবরদখল করে রাখা হয়েছিল। শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক আবদুর রহমানের নির্দেশে আমরা অভিযান চালিয়ে জবরদখলকৃত জায়গা উদ্ধার করেছি।’
এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলেও ওই কর্মকর্তা জানান।
তবে লালন বিশ্বসংঘ আন্তর্জাতিক ধ্যানকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক (কেয়ারটেকার) গোবিন্দ চন্দ্র দে বলেন, ‘আজ ভোরে বন বিভাগের ২৫/৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী হামলা চালিয়ে তিনটি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। আগুনে একটি গোলাঘর, একটি রান্নাঘর, টঙঘরসহ অর্ধলক্ষাধিক টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। তারা আমার ওপর হামলা করে। আমার কাছে থাকা নগদ ছয় হাজার টাকা ও মোবাইল সেট নিয়ে গেছে বন বিভাগের লোকজন।’
তবে ময়মনসিংহ বন বিভাগের বালিজুরী রেঞ্জ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম লালন ‘অভয়াশ্রমে’ অগ্নিসংযোগের ঘটনা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘কর্ণঝোড়া ফরেস্টের সংরক্ষিত বনভূমিতে লালনের নাম ভাঙিয়ে জমি জবরদখল করে ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। জবরদখলকৃত জায়গা উদ্ধারে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান চালাই।’
‘উচ্ছেদ অভিযানকালে গোবিন্দ নামে এক ব্যক্তি আমাদের দেখে পালিয়ে যায়। বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মোবাইল ফোনে জানানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আমরা কিছু মালামাল জব্দ করেছি।’ বলেন বালিজুরী রেঞ্জ কর্মকর্তা।
তরিকুল ইসলাম আরো বলেন, ‘বন বিভাগ পুরো রাজাপাহাড়ে বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। কিন্তু কথিত লালন অভয়াশ্রমের কারণে আমরা সে স্থানে বনায়ন করতে পারছিলাম না।’
প্রায় তিন বছর আগে ভারতীয় সীমান্তসংলগ্ন কর্ণঝোড়া এলাকায় রাজাপাহাড়ের পাহাড়ি টিলায় গড়ে ওঠে ‘লালন বিশ্বসংঘ আন্তর্জাতিক ধ্যানকেন্দ্র অভয়াশ্রম’। লালনভক্ত বলে কথিত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবের সহযোগিতা ও সমর্থনে ওই লালন অভয়াশ্রমটি গড়ে তোলেন লালন গবেষক, লেখক আবদেল মাননান।
আর এ নিয়ে স্থানীয় বন বিভাগের সঙ্গে শুরু থেকেই বিরোধের সৃষ্টি হয়। বন বিভাগ জমিটি নিজেদের বলে দাবি করে আসছিল।