বান্দরবানে পর্যটকের ঢল, শ্রমিকদের হামলায় আহত ৩
ঈদের ছুটিতে বান্দরবানে নেমেছে পর্যটকের ঢল। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এসে ভিড় করেছেন এই পার্বত্য শহরটিতে। পর্যটকদের পদচারণে মুখরিত হয়ে উঠেছে নীলাচল, মেঘলা, নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, প্রান্তিক লেক, রিজুক ঝরনাসহ দর্শনীয় স্থানগুলো।
ভ্রমণপিপাসু মানুষের কারণে তিলধারণের ঠাঁই নেই শহর ও এর আশপাশের আবাসিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট এবং গেস্টহাউসগুলোতে। এর সঙ্গেই বেড়েছে পর্যটকদের হয়রানি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরও থামছে না হয়রানি আর ভোগান্তি।
সবশেষ আজ বৃহস্পতিবার পরিবহন শ্রমিকদের হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত তিন পর্যটক।
চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবানে বেড়াতে আসা পর্যটক রায়হান, জিসানসহ কয়েকজন জানান, তাঁরা চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে টিকেট কেটে পূরবী পরিবহনের গাড়িতে ওঠেন বান্দরবান যাওয়ার জন্য। কিন্তু চেয়ারকোচটি চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত প্রায় ১৪টি পয়েন্টে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায়। অথচ তাঁরা টিকেট কেটেছিলেন বিরতিহীন সার্ভিসের। ফলে যেখানে সেখানে গাড়ি দাঁড়ানোর প্রতিবাদ করেন রায়হানসহ কয়েক যাত্রী।
পরে বাসটি বান্দরবান বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে গাড়ির চালক-সহকারীসহ শ্রমিকরা বাসটির ছয় নারী-পুরুষ যাত্রীকে মারধর করেন। পরে স্থানীয় পরিচিত বন্ধু-স্বজনদের ফোন করলে তাঁরা এসে ওই যাত্রীদের উদ্ধার করেন।
এদিকে এ বিষয়ে গাড়িটির চালক সাজেদ মুন্সী দাবি করেন, ওই বাসের যাত্রীরা চালক ও সহকারীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার ও গালিগালাজ করেন। এমনকি তাঁরা শ্রমিকদের গায়েও হাত তোলার চেষ্টা করেন। সে কারণেই ক্ষিপ্ত শ্রমিকরা ওই যাত্রীদের ওপর হামলা করেন।
তবে গতকাল বুধবারও নেপালের আটজন বিদেশি পর্যটকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে পূরবী-পূর্বাণী বাস সার্ভিসের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে নেপালী পর্যটক ললিত ভাণ্ডারী ও শিবানী বলেন, বান্দরবানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তাঁরা মুগ্ধ। ভ্রমণে কোনো সমস্যা হয়নি তাঁদের। কিন্তু যাওয়ার সময় পূরবী বাস সার্ভিসের শ্রমিকরা টিকেটের বাইরে প্রতিটি ব্যাগের জন্য ১০০ টাকা করে দাবি করে। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁরা ওই পর্যটকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন এবং ব্যাগপত্র নিয়ে টানাটানি করে।
নেপালের এই পর্যটকরা সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন তাঁরা। কিন্তু এমন ঘটনা কোথাও দেখতে পাননি। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে আরো সতর্ক হওয়ার অনুরোধ জানান তাঁরা।
জেলা হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় পর্যটকের আগমন অনেক কমে গেছে বান্দরবানে। গত রোজার ঈদেও পর্যটকের খরা ছিল। তবে এবার ঈদের লম্বা ছুটিতে ব্যবসায়ীরা সেই ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন তাঁরা। তবে পর্যটকদের সঙ্গে শ্রমিকদের এসব ঘটনা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করেন তিনি।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর বান্দরবানে পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কাজ করছে। বেড়াতে আসা পর্যটকদের সঙ্গে শ্রমিকদের বিচ্ছিন্ন যে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে সেগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে হবে বলেও জানান তিনি।