নেত্রকোনা-ঢাকা রুটে ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’, উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী
শত শত উৎসুক জনতার ভিড় ঠেলে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে নেত্রকোনা জেলা শহরের সাতপাই বড়স্টেশনে থামে ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’।
ঢাকা-ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা রুটে দ্বিতীয় আন্তনগর ট্রেনের জন্য নেত্রকোনা জেলাবাসীর অপেক্ষা ও দাবির অবসান ঘটিয়ে চালু হলো এই ট্রেন।
এর আগে দুপুরে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। পরে নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জের উদ্দেশে ট্রেনটি ঢাকা ছেড়ে যায়।
ট্রেনটি নেত্রকোনার সাতপাই স্টেশনে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে শহরে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ‘হাওর এক্সপ্রেস’-এর পর ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ চালু হওয়ার আনন্দে মিষ্টি বিতরণ করা হয় স্টেশন এলাকায়।
এ বিষয়ে নেত্রকোনার উন্নয়নে নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট খানে আলম খান বলেন, ‘আমরা নেত্রকোনার উন্নয়নের জন্য, পিছিয়ে পড়া নেত্রকোনাকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নেত্রকোনায় বাইপাস সড়ক, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও আন্তনগর ট্রেনের জন্য আন্দোলন করেছি। সভা-সমাবেশ-মানববন্ধন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হতে চলেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বাইপাস সড়ক। সর্বশেষ হাওর এক্সপ্রেসসহ মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস চালু হয়েছে।’
উল্লিখিত দাবি বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ধন্যবাদ জানান অ্যাডভোকেট খানে আলম খান।
নেত্রকোনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ঈদ আসন্ন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেওয়া এই ঈদ উপহারে নেত্রকোনাবাসী আনন্দিত। এ জন্য নেত্রকোনাবাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, নেত্রকোনার সন্তান যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ সাজ্জাদুল হাসানকে ধন্যবাদ জানায়।
নতুন এই ট্রেন চালু হওয়ায় সাতপাই স্টেশনে গতকাল রাতে এক সুধী সমাবেশ হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. মুশফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার (এসপি) জয়দেব চৌধুরী, নেত্রকোনার পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আনোয়ার হোছাইন আকন্দ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর খান মিঠু, জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম মুখলেছুর রহমান খান, সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় উপস্থিত সবাইকে মিষ্টিমুখ করান। পরে মোহনগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ট্রেনটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৫৮ আসনের একটি এসি চেয়ারকোচ রয়েছে ট্রেনটিতে। ২৭ আসনের প্রথম শ্রেণির কোচ আছে ট্রেনে। তিনটি শোভন চেয়ারকোচে ১৮০টি ও সাতটি শোভন কোচে রয়েছে ৩৬০টি আসন। একটি পাওয়ার কার ও একটি খাবার গাড়িসহ আরো আছে ৪০টি আসন। নতুন এ ট্রেনে শুধু মোহনগঞ্জবাসীর জন্য ২২২টি আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শোভন রয়েছে ১২০টি, শোভন চেয়ার ৭০টি, এসি (স্নিগ্ধা) ২০টি ও প্রথম বার্থ আসন ১২টি।
প্রতিদিন দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে ট্রেনটি পৌঁছাবে রাত ৮টায়। পরে মোহনগঞ্জ স্টেশন থেকে আবার রাত ১১টায় ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’। ট্রেনে শোভন আসনের টিকেটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮৫ টাকা, শোভন চেয়ার ২২০ টাকা, এসি (স্নিগ্ধা) ৪২৬ টাকা ও প্রথম বার্থ আসনের টিকেটের মূল্য ৪৯০ টাকা।