এনটিভির সংবাদে সন্তানকে ফিরে পেলেন মা-বাবা
হারিয়ে যাওয়ার প্রায় তিন বছর পর স্বজনদের দেখা পেল ফরিদপুর মহিলা ও শিশু-কিশোরী হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসনে বেড়ে ওঠা ১০ বছরের শিশু মিম।
গত সোমবার বিকেল ৫টার সময় ফরিদপুর মহিলা ও শিশু-কিশোরী নিরাপদ আবাসন কর্তৃপক্ষ মিমকে স্বজনদের হাতে তুলে দেয়। মিমসহ ১০ শিশুকে নিয়ে এনটিভিতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর ২৪ দিনের মাথায় আদালতের নির্দেশের পর মিমকে স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর আদরের সন্তানকে ফিরে পেয়ে মা-বাবা ও পরিবারের মধ্য আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ২০১৪ সালের মে মাসের কোনো এক শুক্রবার দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়ে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানার স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকা থেকে নিখোঁজ হয় গফরগাঁও উপজেলার তোফাজ্জল হেসেন ও মাসুদা বেগমের মেয়ে মিম। এরপর থেকে স্বজনদের কাছে যেতে দিনের পর দিন কেঁদে যাচ্ছিল ফুটফুটে মেয়েটি।
তিন মেয়ের মধ্যে মেজো মেয়ে মিমকে খুঁজে ফেরার যন্ত্রণার জীবন শুরু হয় মা-বাবার। বিভিন্ন হাত ঘুরে ২০১৪ সালের জুন মাসে ফরিদপুরের সালথা থানা পুলিশের সহায়তায় মিমের আশ্রয় হয় ফরিদপুর মহিলা ও শিশু-কিশোরী হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসনে।
শুধু মিম নয় এই আবাসনের রয়েছে তারই মতো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হারিয়ে যাওয়া আরো নয় শিশু। গত ১১ আগস্ট বিকেলে ৫টায় দেশের সংবাদে এনটিভিতে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার মাধ্যমে মিমের সন্ধান পান তার বাবা তোফাজ্জল। এর পরের দিন এনটিভি ঢাকা অফিসে এসে ঠিকানা জোগাড় করে যান ফরিদপুর এনটিভির জেলা প্রতিনিধির কাছে। তারপর সেফ হোমে গিয়ে মেয়েকে চিনতে পারেন মা-বাবা। সব কাগজপত্র সঠিক হওয়ার পর আদালত তিনটি তারিখের মধ্যে রায় দেন। গত সোমবার দুপুরে ফরিদপুর ৩ নম্বর আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফাহমিদা খাতুন পুলিশের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মিমকে তার মা-বাবার জিম্মায় দেওয়ার রায় দেন। আর এই রায়ের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়ার তিন বছর পর পরিবার তাদের সন্তান মিমকে খুঁজে পায়।
বাবা তোফাজ্জল গফরগাঁও উপজেলার ধোপাঘাট এলাকা থেকে এসে ভালুকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করে জীবন চালান কোনোমতে। তাঁর এই জীবন থেমে যায় মিমকে হারিয়ে।
মিমের বাবা তোফাজ্জল বলেন, ‘আমি এনটিভির ৫টার দেশের সংবাদ দেখে আমার মেয়েকে চিনতে পেরেছি। এনটিভির জন্যই আমার মেয়েকে আজ ফিরে পাওয়া।’ এনটিভির প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং মঙ্গল কামনা করেন।
ফরিদপুর মহিলা ও শিশু-কিশোরী হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসনের উপতত্ত্বাবধায়ক সাইদুর রহমান মৃধা বলেন, ‘মিমকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। এর সাথে আরো যে শিশু রয়েছে তাদের জন্যও এনটিভি আরো কিছু কাজ করবে, এই আশাই করি।’ তিনি একই সঙ্গে এনটিভিকে অশেষ ধন্যবাদ জানান।
ফরিদপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ এস এম আলী আহসান বলেন, ‘মিমকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে কি যে ভালো লাগছে তা বলে বোঝানো যাবে না।’ এ জন্য এনটিভিকে তাঁদের পক্ষ থেক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি।
মিমকে সোমবার বাড়ি নিয়ে যেতে পেরে আনন্দে আত্মহারা মিমের বাবা। আর মিমকে আজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আবাসন কর্তৃপক্ষেরও যেন আনন্দের শেষ নেই।
বিস্তারিত দেখুন ফরিদপুর থেকে সঞ্জিব দাসের পাঠানো তথ্য ও ছবি নিয়ে শওকত করিমের ডেস্ক রিপোর্টে