কেশবপুরে বাড়ছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
যশোরের কেশবপুরে বন্যার পানি নিষ্কাশনে আনা ড্রেজার কোনো কাজে আসছে না। পানি বেড়েই চলছে। এরই মধ্যে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কেশবপুর পাঁজিয়া সড়কের রাজনগর বাঁকাবর্শি গ্রামের শত শত মানুষ সড়কের পাশে আশ্রয় নিয়েছে।
এলাকায় বেড়েছে সাপের উপদ্রব। আগামী বৃহস্পতিবার ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেশবপুর কার্যালয় ঘেরাও করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক।
বিশুদ্ধ পানীয় জলের তীব্র অভাবের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। হরিহর, ভদ্রা, বুড়িভদ্রা ও খোজাখালি খাল দীর্ঘদিন খনন হয়নি। পলিতে ভরাট হওয়া ও পানি নিষ্কাশনের কালভার্ট ও স্লুইস গেটের মুখে বালুর বস্তা দিয়ে আটকিয়ে রাখার কারণে দূর হচ্ছে না জলাবদ্ধতা। আর এ কারণে কেশবপুরবাসীকে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন থেকে গত শনিবার দিনভর মাইকিং করে নদী ও খালের ভিতরে মাছ শিকারে ব্যবহৃত জাল পাটা ও নেট সরিয়ে ফেলার ঘোষণা দেওয়া হলেও এসব অপসারণের কোনো অগ্রগতি নেই। গত আটদিনেও পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে লাগানো ড্রেজার কোনো কাজে আসেনি।
গত আগস্ট মাসে দুই দফায় প্রবল বর্ষণ , উজানের ও হরিহর নদের উপচেপড়া পানিতে কেশবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও কেশবপুর পৌরসভা এলাকার ৭৬টি গ্রাম বন্যা প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়ায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ যশোর সাতক্ষীরা সড়কের পাশে টংঘর ও ২২টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। যশোর- সাতক্ষীরা সড়কের চিনাটোলা থেকে কেশবপুরের আলতাপোল ২৩ মাইল নামক স্থান পর্যন্ত সড়ক প্লাবিত হয়ে যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া কেশবপুর শহরের ৯টি সংযোগ সড়ক প্লাবিত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বন্যায় উপজেলার ১৫৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে। এ ছাড়া ২০৪টি গভীর ও অগভীর নলকূপ এবং ৯৫৫টি পায়খানা ডুবে গেছে।
এ পর্যন্ত বানভাসীদের জন্য সরকারিভাবে ৫৯ টন চাল ও নগদ ৬৫ হাজার টাকা ও উপজেলা পরিষদ থেকে পাঁচ লাখ টাকার শুকনা খাবার ও পলিথিন সরবরাহ করা হয়েছে ।
পাঁজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মুকুল জানান, ইউনিয়নের হদ, পাঁজিয়া, বাগডাঙ্গা , মনোহরনগর ,রাজনগর বাঁকাবর্শি, সাগরদত্তকাটি গ্রামে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজনগর বাঁকাবর্শি গ্রামের এমন কোন বাড়ি নেই যেখানে পানি ওঠেনি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রেজাউল ইসলাম গাজী জানান, রাজনগর বাঁকাবর্শি গ্রামের ৯০ ভাগ এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়ে আছে। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ মঙ্গলবার বিকেল থেকে কেশবপুর পাঁজিয়া সড়কের পাশে টং ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। কেশবপুর-সাগরদাঁড়ি, কেশবপুর-পাঁজিয়া সড়কে পানি ওঠায় সড়কে ভারী যান বাহন চলাচল করায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
ভবানিপুর গ্রামের বাসিন্দা ও সাংবাদিক নুরুল ইসলাম খান জানান, তাঁর এলাকায় সাপের উপদ্রব বেড়েছে। সাপ তাঁর বাড়ির ছয়টি মুরগি মেরে ফেলে। তাঁর পরিবারের সদস্যও অল্পের জন্য সাপের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।