জঙ্গিদের আবার মানবাধিকার কিসের, প্রশ্ন আইজিপির
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গিদের প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, যারা মানুষের অধিকার রক্ষা করে না, তাদের আবার মানবাধিকার কিসের। আগে দেশ ও প্রিয় জন্মভূমিকে বাঁচাতে হবে, জনগণকে বাঁচাতে হবে। তারপর রাজনীতি। দেশের স্বার্থেই রাজনীতি, জনগণের স্বার্থেই রাজনীতি। সব বিষয়েই বিরোধিতা করলে হবে না।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার দুপুরে পুলিশ লাইন মাঠে কমিউনিটি পুলিশিং এবং জঙ্গিবাদবিরোধী মহাসমাবেশে আইজিপি এসব কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, পৃথিবীর সব দেশে জঙ্গিদের সরাসরি ক্রসফায়ার করা হয়। তবে বাংলাদেশে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু জঙ্গিরা গ্রেপ্তার হতে চায় না। তারা আত্মঘাতী। তাদের মিশন- হয় মারব, না হয় মরব। আর এ জন্যই তারা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জড়াচ্ছে, মারা পড়ছে।
এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘কল্যাণপুর ও নারায়ণগঞ্জে আমরা জঙ্গিদের অনেক সময় দিয়েছি। কিন্তু তারা আত্মসমর্থন করেনি। উল্টো পুলিশকে বোমা মেরেছে, গুলি করেছে। পরে বাধ্য হয়ে তাদের বিরুদ্ধে অপারেশন চালাতে হয়েছে। এতে পুলিশেরও ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করা সহজ বিষয় না। তারা আত্মঘাতী, তারা মেন্টালি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকে। তারা নিজেরাই বলে, আমরা মরব, জান্নাতে যাব; যাদের মারব তারা জাহান্নামে যাবে। তারা কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিজেকে ধরা দিতে চায় না। তাদের কাছে বোমা আছে, আগ্নেয়াস্ত্র আছে, ধারালো অস্ত্র আছে। তাদের আদর দিয়ে গ্রেপ্তার করা যায় না।’
পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, ‘জঙ্গিরা দেশের অগ্রগতিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সফল হবে না, আমরা জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পাচ্ছি। এই দেশকে জঙ্গিদের দেশ করতে দেওয়া হবে না, অকার্যকর করতে দেওয়া হবে না। এই দেশকে নিরাপদ, উন্নত বাংলাদেশ হিসেবে পড়ে তুলব।’
হত্যাকাণ্ডে জড়িত নয় এমন জঙ্গিরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইলে পুলিশ তাদের সহযোগিতা করবে জানিয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘দেশের তরুণ সমাজকে ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তাদের জান্নাতের লোভ দেখানো হচ্ছে। জঙ্গিবাদ ইসলাম নয়। যারা ভুলবশত জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করেছেন, কিন্তু এখনো কোনো অপরাধ করেননি, এসব ব্যক্তিদের যদি শুভবুদ্ধির উদয় হয়, তাহলে দয়া করে নিজ পরিবারের কাছে চলে আসেন, সমাজে চলে আসেন, সঠিক পথে চলে আসেন। পুলিশ প্রশাসন আপনাদের সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করবে, আপনাদের হয়রানি করবে না। সেই নিশ্চিয়তা আমি দিলাম।’
পুলিশপ্রধান বলেন, ২০১৩ সালের পর থেকে সারা দেশে ৫৭টি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৪৯টি ঘটনারই কারণ উদঘাটন করা গেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৫৭ জনকে। বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে অনেকেই। তাই পুলিশের সাফল্য যথেষ্ট। কিন্তু একটি মহল পুলিশকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এসব করে কোনো লাভ হবে না। কারণ, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দেশে আজ গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ সব মানুষকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করছে।
পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সঙ্গে ২৭টি ক্ষেত্রে পুলিশ সরাসরি কাজ করতে পারে। এখন এই কমিটির প্রধান কাজ হবে জঙ্গিবাদ নির্মূলে ভূমিকা রাখা। কারণ, জঙ্গিবাদ এখন দেশের প্রধান সমস্যা। দ্বিতীয় মাদক। এসব কিছুই আমরা নির্মূল করব। দেশকে সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই গড়ব।’
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, বিভাগীয় কমিশনার আবদুল হান্নান, জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দীন, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খোরশেদ হোসেন, র্যাব ৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলম, রাজশাহী বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহজাহান সিরাজ, রাজশাহী মহানগর কমিউনিটি পুলিশিংয়ের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম-উল-আযীম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য দেন।
পরে আইজিপি রাজশাহীতে জঙ্গিবাদবিরোধী শোভাযাত্রায় অংশ নেন এবং বিশিষ্টজনদের মধ্যে ক্রেস্ট বিতরণ করেন। এর আগে মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হন কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা।