বিজিবির দাবি মাদক ব্যবসায়ী, প্রতিবাদে সংঘর্ষে জড়াল গ্রামবাসী
স্থানীয় এক যুবককে আটকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার তাওয়াকুচায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের সাথে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
বিজিবির দাবি ওই যুবক মাদক ব্যবসায়ী। অন্যদিকে এলাকাবাসীর দাবি, সে নিরীহ কলেজছাত্র। বিজিবির কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় তাঁকে মাদক ব্যবসায়ী সাজানো হচ্ছে।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় হওয়া এই সংঘর্ষে চার বিজিবি সদস্য ও ছয় গ্রামবাসী আহত হয়েছে। ঝিনাইগাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে তাদের।
এদিকে ঘটনাস্থলটি বেশ প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত সংঘর্ষের খবর গণমাধ্যমে আসেনি। দুপুরে বিজিবির পক্ষ থেকে ঝিনাইগাতী থানায় গতকাল বুধবারের ঘটনায় ৩০ জন গ্রামবাসীকে অভিযুক্ত করে একটি অভিযোগ দায়ের করা হলে বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের নজরে আসে।
ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকালকের ঘটনায় আহত বিজিবি সদস্যরা হলেন-তাওয়াকুচা সীমান্ত ফাঁড়ির হাবিলদার ইলিয়াস, ল্যান্স নায়েক মোশারফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক মাহমুদ ও সিপাহী শহিদুল ইসলাম।
অন্যদিকে যে ছয় গ্রামবাসী আহত হয়েছেন তাঁরা হলেন-মোছাম্মৎ রাজিয়া বেগম (৫০), লালভানু (৩৫), মাজেদা বেগম (২৫), আব্দুছ সাত্তার (৫০), মোছাম্মৎ গোলাপি বেগম (৪৫) ও রফিকুল ইসলাম (৩২)।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঝিনাইগাতীর ভারত সীমান্ত সংলগ্ন তাওয়াকুচা বিজিবি ক্যাম্পের কাছে রেহাল (২২) নামের এক যুবক মোটরসাইকেলে যোগে ঝিনাইগাতী সদরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় সীমান্তে টহলরত বিজিবির একটি দল তাঁকে চ্যালেঞ্জ করে। বিজিবি টহলদলের অভিযোগ রেহার মোটরসাইকেলে ইয়াবা পাচার করছেন। এমন অভিযোগে বিজিবির টহল দলটি রেহালকে আটক করলে স্থানীয়রা এর প্রতিবাদ জানায়। এ সময় বিজিবির সদস্যরা গ্রামবাসীর ওপর লাঠিচার্জ করে। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) নকশি সীমান্ত ফাঁড়ির কোম্পানি কোমান্ডার সুবেদার মো. নাজিম উদ্দিন জানান, গত সন্ধ্যায় তাওয়াকুচা সীমান্ত ফাঁড়ির বিজিবি টহলদল ইয়াবা পাচারের সময় স্থানীয় রেহাল নামের এক যুবককে আটক করে। রেহাল মোটরসাইকেলযোগে ইয়াবা পাচার করছিলেন। সোমেশ্বরী নদীর বালিজুরী ব্রিজের ওপর রেহালের লোকজন এসে বিজিবি সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে। এতে ওই চার বিজিবি সদস্য আহত হন। এ সময় বিজিবি সদস্যদের হাতে থাকা একটি চাইনিজ রাইফেল ভেঙে ফেলে হামলাকারীরা। খবর পেয়ে তাওয়াকুচা বিজিবি ক্যাম্প থেকে অন্য সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে রেহালের লোকজনের ওপর লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে স্থানীয় গোলাপ হোসেন, আবুল কালাম ও হযরত আলী মেম্বার জানান, বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে তাওয়াকুচা ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা এলাকাবাসীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করলে রেহাল এর প্রতিবাদ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবির টহল দল তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকাবাসী ও তার পরিবারের লোকজন বাধা দেয়। এ সময় বিজিবি সদস্যরা লাঠিচার্জ করেন।
যাকে নিয়ে এত ঘটনা সেই রেহাল মিয়া বলেন, ‘আমি শেরপুর সরকারি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ফাইনাল দিয়ে বাড়িতে আসি। গত শনিবার বিজিবির কিছু সদস্যের সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার তারা আমাকে আটক করে ফাঁড়িতে নিতে চাইলে আমার পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী প্রতিবাদ করে। এর ফলে বিজিবির সঙ্গে গ্রামবাসীর ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’
ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ময়মনসিংহ ২৭ ব্যাটালিয়নের মেজর মাহফুজ উল্লাহ বিজিবি ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন।