‘জঙ্গি’ রিপনের লাশ নেবে না স্বজনরা
বগুড়ার শেরপুরে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত নতুন জঙ্গি সংগঠন আনসার রাজশাহীর ‘মূল হোতা’ আবু ইব্রাহীম ওরফে তারেক ওরফে রিপন ওরফে তানের (২৫) লাশ নেবে না বলে জানিয়েছে তার স্বজনরা।
রাজশাহী মহানগরীর পাঠানপাড়া এলাকার ১৬৯ নম্বর বাড়িটি রিপনের। রিপনের বাবা গোলাম সবুর ওরফে বাবলা মারা যাওয়ার পর তার দাদি তাকে তিনতলা এ বাড়িটি নির্মাণ করে দেন। রিপন থাকত নিচতলায়। দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন তার চাচা আবদুস সালাম। আর তিনতলা ভাড়া দিয়েছে রিপন।
মঙ্গলবার দুপুরে বাড়িটিতে গেলে নিচতলা তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। দোতলায় উঠে কথা হয় রিপনের চাচি বেবি বেগম ও চাচাতো বোন তমা খাতুনের সঙ্গে। তারা জানায়, জঙ্গি রিপনের লাশ তারা নিতে আগ্রহী নয়। রাষ্ট্রবিরোধী জঙ্গিকে নিজেদের আত্মীয় বলে পরিচয় দিতেও লজ্জা পায় তারা।
বেবি বেগম জানান, ছোটবেলায় রিপনের বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা ঝর্ণা বেগম দ্বিতীয় বিয়ে করে চলে গেছেন। তিনি এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হোস্টেলের আয়া হিসেবে চাকরি করেন। তিনি ছেলের লাশ নিতে চান না। এ ছাড়া আত্মীয়স্বজন যারা আছে, তারাও কেউ লাশ নিতে আগ্রহী নয়।
পাশের দরগাপাড়া মহল্লার ৯২ নম্বর বাড়িটি রিপনের দুলাভাই হাফিজুর রহমানের। এ বাড়িতে গিয়ে কথা হয় রিপনের বোন সামিনা ফেরদৌস তিন্নার সঙ্গে। তিনি জানান, রিপনের একমাত্র অভিভাবক বলতে গেলে এখন তিনিই। তবে তিনি তার লাশ গ্রহণ করবেন না।
তিন্না আরো জানান, সোমবার রিপন বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার পর ওই দিনই বিকেলে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকেসহ তার স্বামী হাফিজুর রহমান, চাচা আবদুস সালাম ও চাচাতো ভাই ইউসুফ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। তখনই তাঁরা পুলিশকে রিপনের লাশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। পরে রাতে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
কান্নায় ভেঙে পড়ে সামিনা ফেরদৌস বলেন, ‘বোন হিসেবে ভাইয়ের জন্য মন কাঁদছে। কিন্তু কিছু করার নেই। কোনো দেশবিরোধী জঙ্গির লাশ গ্রহণ করতে পারি না। লাশ গ্রহণ করলে সমাজের মানুষ আমাদের ক্ষমা করবে না। আমরা রাষ্ট্রের কাছে ছোট হয়ে যাব। আমরা আমাদের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছি, কেউ লাশ নেওয়ার পক্ষে নয়।’
গত সোমবার ভোরে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিশালপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জেএমবির সামরিক কমান্ডার বদর মামা ওরফে খালেদ মামা এবং আনসার রাজশাহীর আবু ইব্রাহিম ওরফে তারেক ওরফে রিপন নিহত হয়। খালেদ মামার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে বগুড়ার শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরফান আলী জানান, তাদের লাশ এখন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা আছে। তাদের স্বজনরা লাশ নেবে কি না, তা এখনও রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। স্বজনরা লাশ নিতে না চাইলে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন অথবা আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে জঙ্গিদের লাশ দাফন করা হবে।