ভূমিকম্প : বাংলাদেশের সময় নিকটবর্তী!

ভূমিকম্পের ভয়াবহ ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে ভূমিকম্পের কারণে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত শনিবার নেপালে ঘটা ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত তিন হাজার ৭০০ মানুষ মারা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি নির্দিষ্ট এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্প সংগঠিত হওয়ার জন্য ১০০ থেকে ১৫০ বছর সময় নেয়। ওই হিসাবে বাংলাদেশের সময় নিকটবর্তী। কেননা ১১২ বছর আগে বাংলাদেশ ও আসামে আঘাত করেছিল শক্তিশালী ভূমিকম্প। এ কারণে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ।
বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, মধুপুর-ডাউকি চ্যুতিতে রিখটার স্কেলে সাত মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। নেপালে গত শনিবার আঘাত করা ভূমিকম্পটি ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার।
জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, যদি ডাউকি চ্যুতি থেকে আট থেকে নয় রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প হয়, তাহলে ব্যাপকহারে ভবন ধ্বংস হবে আর মানুষ মারা যাবে প্রায় এক লাখ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘ঢাকা নগরীর কাছেই মধুপুর চ্যুতি ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ চ্যুতি থেকে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছিল ১২৭ বছর আগে ১৮৮৫ সালে। এখন ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে ওই চ্যুতিতে এবং বড় কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে।’
হুমায়ুন আরো বলেন, ‘বর্তমান প্লেট পূর্ব থেকে পশ্চিমে (মেঘনা –যমুনা বেসিন) সরে যাচ্ছে। যার কারণে ঢাকা ঝুঁকির মধ্যে আছে।
তথ্য উল্লেখ করে অধ্যাপক হুমায়ুন বলেন, মধুপুর চ্যুতিতে বুড়িগঙ্গা নদীর তলদেশে চার দশমিক পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল ২০০১ সালে। পরে ২০০৮ সালে আরো দুটি ছোট কম্পন অনুভূত হয়।
অধ্যাপক হুমায়ুন বলেন, ‘এর মানে হচ্ছে মধুপুর একটি জীবন্ত চ্যুতি। যখন এর শক্তি চরম আকারে পৌঁছাবে তখন ভয়াবহ ভূমিকম্প ঘটতে পারে, যার ফলে ঢাকা শহর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘যদিও সিলেট ও চট্টগ্রামের চেয়ে ঢাকা কম ঝুঁকিপূর্ণ, তবুও নরম মাটিতে কম শক্তিশালী স্থাপনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’ তিনি আরো বলেন, ‘অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নিচু ভূমিতে এবং জলাভূমিতে ভবন নির্মাণ ঢাকা শহরে ভূমিকম্পের ঝুঁকিকে তীব্র করছে।’
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তথ্যানুযায়ী, ঢাকা শহরে অবৈধ নকশা, জাতীয় ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ভঙ্গ করে এমন ভবনের সংখ্যা ১০ হাজার। যা ভূমিকম্পে ঝুঁকির বিষয়টি বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শক্তিশালী একটি ভূমিকম্পে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বহুসংখ্যক ভবন ধ্বংস হয়ে যাবে।
সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) ২০১০ সালে ভূমিকম্পে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জনসংখ্যাবহুল ঢাকাতে রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৭৮ হাজার ৩২৩টি ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। মধুপুর চ্যুতিতে যদি সাড়ে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয় তবে ৭২ হাজার ৩১৬টি ভবন ধ্বংস হয়ে যাবে এবং ৫৩ হাজার ১৬৬টি ভবন আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মধুপুর চ্যুতিতে সাড়ে সাত মাত্রার ভূমিকম্পে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ হবে প্রায় এক দশমিক এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ রকম বিপর্যয়ে রাজধানীতে ১০টি বড় হাসপাতাল, ৯০টি বিদ্যালয় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। এ ছাড়া ২৪১টি হাসপাতাল এবং ক্লিনিক, ৩০টি থানা, ফায়ার সার্ভিসের চারটি কেন্দ্র আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।