জাজিরায় পদ্মার তীব্র ভাঙন, স্রোতে নিখোঁজ দুই বৃদ্ধ
এক সপ্তাহ বিরতি দিয়ে আবার পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কুণ্ডেরচর ইউনিয়নের কলমীরচর খেজুরতলা এলাকায়।
গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে ঘরবাড়ি, গাছপালাসহ অন্তত ২০ শতাংশ জমি হঠাৎ দেবে যায় নদীতে। নিজেদের ঘরবাড়ি সরানোর সময় অন্তত আট ব্যক্তি অন্যান্য স্থাপনার সঙ্গে নদীগর্ভে চলে যায়। স্থানীয়দের তাৎক্ষণিক চেষ্টায় চয়জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও নিখোঁজ রয়েছেন এলাকার দুই বৃদ্ধ।
এঁরা হলেন কলমিরচর গ্রামের দরিদ্র কৃষক আবদুর রশিদ শিকদার (৬৮) ও ঈশ্বরকাঠি গ্রামের বাদাম বিক্রেতা মোসলেম ফকির (৭০)।
স্থানীয়রা জানান, এক মাস ধরে কুণ্ডেরচরের কলমিরচর এলাকার কয়েকটি গ্রামে প্রবল ভাঙন শুরু হয়েছে। সপ্তাহখানেক বিরতির পর মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে হঠাৎ করে আবার ভাঙন শুরু হয়।
এ সময় নিজেদের ঘর-দরজা ও মালামাল সামলাতে গিয়ে এলাকার হাজী সামসুদ্দিন মোল্লা, খালেক সরদার, রশিদ শিকদার ও মোসলেম ফকিরসহ মোট আটজন পানিতে পড়ে যান। রাতের অন্ধকারে ছয়জনকে উদ্ধার করা গেলেও বাকি দুই বৃদ্ধকে পাওয়া যায়নি। পদ্মার প্রবল স্রোতে তাঁরা কোথায় ভেসে গেছেন তার কোনো হদিস মেলেনি।
সারা রাত পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে খোঁজাখুঁজি করেও তাঁদের সন্ধান পাননি স্বজনরা। আজ বুধবার ভোর থেকে পুনরায় কয়েকটি ট্রলার নিয়ে পদ্মা নদীর ওয়াপদা, সুরেশ্বর, কাঁচিকাটা, পালেচর, মাওয়া, শিমুলিয়া এলাকা চষে বেড়ালেও খোঁজ মেলেনি ওই দুই বৃদ্ধের। এলাকাবাসীর ধারণা, দুই বৃদ্ধ পানির তোড়ে কোথাও ভেসে গেছেন।
এরই মধ্যে নদীভাঙনে কুণ্ডেরচর ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম, খেজুরতলা বাজার, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বসতবাড়ি, ফসলি জমি, পাকা সড়ক, পল্লী বিদ্যুতের লাইন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পদ্মাবক্ষে বিলীন হয়েছে। এতে পাঁচ শতাধিক পরিবার তাদের বসতবাড়ি হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।
আজ বুধবার পদ্মা পারের কুণ্ডেরচর ইউনিয়নের চোকদার কান্দি গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষের ভিড়। জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পদ্মা নদীর ভাঙন দেখতে এসেছেন তাঁরা। মুহূর্তেই হারিয়ে যাচ্ছে ভিটা, কবরস্থান। এর মধ্যেই স্থাপনা সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হতে দেখা যায় অনেককে। ভিটামাটি হারিয়ে অনেকেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠছেন। কেউ কেউ ছুটছেন আশ্রয়ের খোঁজে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি রাস্তার পাশে। আবার কেউ জায়গা না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
গ্রামের সোহরাব খালাশী (৪৫) বলেন, মাথা গোঁজার জন্য আমার এই বাড়িটুকই ছিল। এখন পদ্মায় তাও ভেঙে নিয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আশ্রয় নেওয়ার জায়গাটুকু থাকল না।
নিখোঁজদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, স্বজনদের আহাজারি চলছে। সরকারের কাছে তাদের শুধু একটাই দাবি, অন্তত এই দুই বৃদ্ধের মরদেহটা যেন তারা ফিরে পেয়ে দাফন করার সুযোগ পায়।
নিখোঁজদের একজনের স্বজন আবুল হোসেন পেদা বলেন, ১৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও তাঁদের উদ্ধারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চেষ্টা করা হয়নি।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে। শরীয়তপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লোকজন ১৬ ঘণ্টা পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও তাদের কোনো নিজস্ব ডুবুরি না থাকায় উদ্ধারকাজে তারা কোনো সহায়তা দিতে পারেনি।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেছেন, নদীভাঙনে নিখোঁজদের উদ্ধারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হবে। আর যারা তাদের সহায়-সম্বল নদীগর্ভে হারিয়েছেন তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে সাধ্যমতো সব ধরনের সাহায্য করা হবে।