কেশবপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি
যশোরের কেশবপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার ৫২টি গ্রামের প্রায় ১৬ হাজার পরিবার। ১৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে তিন হাজার ১০০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
বুড়িভদ্রা, হরিহর ও আপারভদ্রা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদীর পানি উপচে এখন কেশবপুর শহরে প্রবেশ করেছে। যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের নয়টি স্থান পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা তিনদিনের প্রবল বর্ষণসহ ঝড়ো হাওয়া ও উজানের পানিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বন্যার পানির কারণে শত শত পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু স্থান ও শহরের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিচ্ছে।
বন্যার পানি ও দুই দিনের বিরামহীন বৃষ্টিতে প্লাবিত এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। যারা এখনো গ্রামাঞ্চলে পানিবন্দি অবস্থায় আছে তারা গৃহপালিত পশুপাখি, সাপ, পোকামাকড়ের সঙ্গে বসবাস করছে। তাদের উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্লাবিত এলাকায় শিশুখাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৬ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৫টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে তিন হাজার ১০০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের রান্না ও খাওয়া হচ্ছে না। প্রবল বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার। দুইদিন ধরে গ্রামাঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল মোতালেব জানান, বুড়িভদ্রা, হরিহর ও আপারভদ্রা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪ ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ হাজার ৭৯৪ হেক্টর জমির আউশ, আমন, সবজি ও পানের ক্ষতি হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য ৪৫ কোটি ৯০ লাখ ৭৯ হাজার ৩০৫ টাকা।
বন্যার পানিতে ৮৯ কোটি ১৭ লাখ ৮৫ হাজার ৩১৫ টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, বন্যার পানিতে মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মিলে ২০৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর জানায়, বন্যার পানিতে ৯৫৫টি ল্যাট্রিন ১১০টি অগভীর ও ৯৪টি গভীর নলকূপ তলিয়ে গেছে।
এদিকে, প্রতিদিন পানি নিষ্কাশন ও ত্রাণের দাবিতে বানভাসি মানুষ শহরে এসে সমাবেশ ও মানববন্ধন করছে। আজ সোমবার বিকেলে পানি নিষ্কাশনের দাবিতে কেশবপুর পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বলে নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকী জানিয়েছেন।
যশোর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, ‘দ্রুত বন্যার পানি নিষ্কাশনের জন্য হরিহর নদ খননের প্রয়োজন হলেও আমাদের হাতে ভাসমান কোনো ড্রেজার নেই। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য কেশবপুরের সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক পানি সম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। ড্রেজার মেশিন পাওয়া গেলে পলি অপসারণের কাজ শুরু করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ রায়হান কবির জানান, নতুন করে বৃষ্টি হওয়ায় আরও দেড় ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার ৩০০ পরিবারকে পলিথিন দেওয়া হয়েছে এবং উপজেলা পরিষদ থেকে চার লাখ টাকার শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে।