কেশবপুরে পানিবন্দি ১৫ হাজার পরিবার, বিপর্যস্ত জনজীবন
যশোরের কেশবপুর উপজেলার হরিয়র নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এ উপজেলার প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার পরিবার। যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের নয়টি স্থানে পানি উঠেছে।
এদিকে গতকাল শনিবার রাত ৯টা থেকে আজ রোববার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কেশবপুর উপজেলায় ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বন্যার পানির কারণে মানুষ যখন গ্রাম ছেড়ে শহরে আশ্রয় নিয়েছে তখন ঝড় ও বৃষ্টিতে মানুষ মাথা গোজার ঠাঁইটুকুও হারাচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ১৫ হাজার ৪৭৫ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১২টি । এসব কেন্দ্রে ২৬৫৮টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তবে প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে আজ সকাল থেকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে কোনো রান্না হয়নি। সেই সঙ্গে গতকালের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চার হাজার ৬৬৭ পরিবার।
এ ছাড়া প্রায় ৬০০ পরিবার যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের মধ্যকুল এলাকায় টং ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। দুর্গতদের সাহায্যার্থে যশোর জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ হিসেবে পাওয়া গেছে ৩৯ টন চাল।
কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, হরিয়র নদের পানি বিপৎসীমার ১ দশমিক ১৫ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী তীরবর্তী ও গ্রামাঞ্চল থেকে মানুষজন ঘর ছেড়ে শহরে চলে যাচ্ছে। কেশবপুর শহরেও পানি প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া কপোতাক্ষ নদের বাঁধ ভেঙে আশপাশের গ্রামে পানি প্রবেশ করছে।
এদিকে লাগাতার ঝড় ও বৃষ্টির কারণে কেশবপুরে সকাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানায়, ঝড় ও বৃষ্টির কারণে বৈদ্যুতিক তারে গাছ ভেঙে পড়ায় অনেক স্থানে তার ছিড়ে গেছে। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ রায়হান কবীর জানান, মানুষ দুর্যোগের মধ্যে দিন যাপন করছে। বিভিন্ন সড়কে আশ্রয় নেওয়া ৩০০ পরিবারের মধ্যে পলিথিন সরবরাহ করা হবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম জানান, বন্যার পানিতে ৮৭ কোটি ৭ লাখ ৮১ হাজার ৯০৫ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ৬৫০ পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার সরবরাহ করেছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা প্রায় ৮০০ পরিবারের মধ্যে খাবার সরবরাহ করেছে। কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম আজ রোববার এক হাজার পরিবারকে পাঁচ কেজি করে চাল দিয়েছেন।
এদিকে বিশুদ্ধ পানির অভাবে আশ্রয় কেন্দ্রে ২২ জন ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মীরা।