নরসিংদীতে আদিবা হত্যায় একজনের মৃত্যুদণ্ড
নরসিংদীর পলাশে স্কুলছাত্রী মাইশা মেহজাবিন আদিবা (১৩) হত্যা মামলায় একমাত্র আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। হত্যার পর স্বর্ণালংকার চুরির দায়ে ওই ব্যক্তিকে আরো ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন এই রায় দেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামির নাম মিজানুর রহমান ওরফে মিজান (২৮)। তাঁর বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়াপুর এলাকায়। বাবার কর্মসূত্রে তিনি ঘোড়াশাল সার কারখানা কোয়ার্টারে থাকতেন।
আদালত-সংশ্লিষ্ট ও মামলা সূত্রে জানা যায়, নিহত আদিবার বাবা মাহবুব আলমগীর ঘোড়াশাল সার কারখানায় কাজ করেন। বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। চাকরির সুবাদে তিনি পরিবার স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান আদিবাকে নিয়ে সার-কারখানার কর্মচারী কোয়ার্টারের তৃতীয় তলায় বসবাস করেন। আদিবা ঘোড়াশাল সার কারখানা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর আদিবা বাসায় একা ছিল। বাবা ছিলেন বাইরে। শিক্ষিকা মা সানিয়া আক্তার নিচে শরীরচর্চা করছিলেন। রাতে সানিয়া আক্তার বাসায় ঢুকে আলমারি দরজা খোলা দেখতে পান। মেয়েকে ঘরে না পেয়ে বাথরুমে গিয়ে গলাকাটা লাশ দেখে চিৎকার শুরু করেন। পরে আশপাশের লোকজন এসে পুলিশে খবর দেয়।
এই ঘটনায় আদিবার বাবা পলাশ থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা ও চুরির মামলা করেন। প্রাথমিক অবস্থায় এই হত্যার কোনো মোটিভ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তৎকালীন পলাশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বদরুল আলম (বর্তমানে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওই হত্যার রহস্য উদঘাটন করে গ্রেপ্তার করেন মিজানকে। গ্রেপ্তারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মিজান। মিজান একাই হত্যা করে স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যান।
ওসি বদরুল আলম জানান, ‘এই হত্যার ঘটনাটি কেন ঘটেছে তার কোনো ধরনের মোটিভ পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। মাসের পর মাস বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে খুনি মিজানকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। তারপর তাঁকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেই। সে একই বিল্ডিংয়ে বসবাসের সুবাদে কৌশলে আদিবাদের বাসায় ঢুকে আলমারি ভেঙে স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পড়ার টেবিলে বসা আদিবা তাকে বাধা দিলে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে অচেতন করে ফেলে। পরে বাথরুমে নিয়ে ওড়না দিয়ে ঝরনার পাইপে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা করলে পাইপ ভেঙে পড়ে। এরপর ধারালো চাকু দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে আদিবাকে। শুধু স্বর্ণালংকার চুরি করতে গিয়ে এই নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটায় মিজান।’
এদিকে একমাত্র সন্তানের খুনির ফাঁসির আদেশ হয়েছে শুনে আদালত প্রাঙ্গণে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা সানিয়া আক্তার। তিনি রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং অতিদ্রুত রায় কার্যকর করার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট সরকার কাউছার আহমেদ ও আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট আবদুল হান্নান।