সুন্দরবন টেক্সটাইলে ধর্মঘট, চার দিন উৎপাদন বন্ধ
মজুরি না বাড়ানোয় শ্রমিক অসন্তোষের মুখে অচল হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরার সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস। চার দিন ধরে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিচ্ছেন না। ফলে মিলের উৎপাদনও শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
কাজে যোগদানে বিরত থেকে গত সোমবার থেকে মিল শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছেন। তাঁরা মজুরি বাড়াতে তিন দিনের আলটিমেটাম ঘোষণা করেন। বুধবার সময়সীমা শেষ হয়ে গেলেও দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় তাঁরা কাজে ফিরে যাননি।
তবে মিলের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আবু হানিফ জানান, তিনি শ্রমিকদের কাছে গিয়ে তাঁদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে কাজে যোগ দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
কাজে যোগ দেওয়াটা শ্রমিকদের দাবি পূরণে সহায়ক হবে উল্লেখ করে ডিজিএম বলেন, ‘মিলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে ঘাটতিও বাড়তে থাকবে। ফলে সমস্যার সমাধান হওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে।’
কয়েকজন শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, তাঁদের দৈনিক মজুরি শ্রেণিভেদে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। এই মজুরি কমপক্ষে ৩০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। এ নিয়ে বারবারই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন তাঁরা। কর্তৃপক্ষ কেবলই সময়ক্ষেপণ করছে।
শ্রমিক নেতা রেকসোনা খাতুন ও হোসনে আরা জানান, তাঁদের দাবির কোনো মূল্যায়ন নেই। এ জন্য আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
শ্রমিক নেতা পবিত্র মণ্ডল জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কাজে যোগ দেবেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৪ সাল থেকে উৎপাদনে যাওয়া সাতক্ষীরা সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস প্রথম দশকে ব্যাপক মুনাফা করতে থাকে। মুনাফার টাকায় সরকার ১৯৯২ সালে সেখানে নীলকমল নামে আরো একটি ইউনিট বসায় এবং এক হাজার ৪০০ টাকুবিশিষ্ট রিং মেশিন বসানো হয়। মিলের দুটি ইউনিটের মুনাফা থেকে সমুদয় চাহিদা মিটিয়েও দেশের আরো চারটি লোকসানমুখী মিলে অর্থ জোগান দিত সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস। এর পরবর্তী দশকের শুরুতে মিলটিকে লোকসান গুনতে হয়। অব্যাহত লোকসান গুনতে না পেরে ১৯৯৭ সালে সরকার শেষ পর্যন্ত মিলটি সার্ভিস চার্জের ভিত্তিতে চালাতে থাকে।
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের মেসার্স সুমন এন্টারপ্রাইজ দুই বছরের সার্ভিস চার্জ চুক্তিতে সুন্দরবন টেক্সটাইল চালু রেখেছে। সেখানে এখনো নো ওয়ার্ক, নো পে ভিত্তিতে শ্রমিক সংখ্যা ৩৫০ জন। মিলটি এখনো চলছে লোকসানে। প্রতিদিন গড়ে আট বেল সুতা এখানে উৎপাদিত হয়। প্রতি মাসে শ্রমিক মজুরি ১০ লাখ টাকারও বেশি পরিশোধ করা হচ্ছে।
ডিজিএম আবু হানিফ জানান, মিলের দুই ইউনিটে ৩৮টি রিং মেশিন রয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে এই ৩৮টি মেশিন একযোগে চালানো সম্ভব হয় না। ফলে উৎপাদন টার্গেট শতকরা ৮০ শতাংশ ধরা হলেও সর্বোচ্চ ৬৬ শতাংশের বেশি পূরণ হচ্ছে না । তিনি জানান, এ অবস্থায় শ্রমিকরা কাজে যোগ না দেওয়ায় এখন উৎপাদন নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়।
সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের শ্রমযোগ্যতা ও বয়স ব্যক্তিমালিকানাধীন মিলের শ্রমিকদের সমান নয় উল্লেখ করে আবু হানিফ বলেন, ‘ব্যক্তিমালিকানাধীন মিলে চাকরির সক্ষমতা নেই তাঁদের। এখানে কর্মরত শ্রমিকরা খুবই গরিব। বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের অনেকই স্বামী পরিত্যক্ত, বিধবা কিংবা দরিদ্র পরিবারের সদস্য। এ অবস্থায় শ্রমিক সংকটের কারণে তারা মিলে ওভারটাইম করার সুযোগ পান। এতে তাঁদের দিনমজুরি ২০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে।’
তবে এ মজুরি নগণ্য স্বীকার করে প্রতিষ্ঠানটির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এ সমস্যা দেশের আরো একাধিক মিলে রয়েছে। সেসব স্থানে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করেননি। তাঁরা কাজ করছেন, আবার আন্দোলনও করছেন। মিলে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে পারলে তাঁদের দাবি আদায় সহজ হবে।’