শ্বশুরের কুপ্রস্তাব না শোনায় মুন্নীকে হত্যা!
‘আমার মেয়ে মুন্নী আত্মহত্যা করেনি। মুন্নীর শ্বশুর তাকে কুপ্রস্তাব দিত। এতে সাড়া না দেওয়ায় মুন্নীকে হত্যা করা হয়েছে।’
বুধবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন মুন্নীর মা নাসিমা বেগম, বাবা সিদ্দিকুল ইসলাম ও ফুফু দেলোয়ারা খাতুন।
গত ২৮ জুলাই শ্যামনগর উপজেলায় উত্তর কদমতলায় শ্বশুরবাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় মুন্নীর লাশ। মুন্নীর গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল বলে জানান মুন্নীর বাবা ও মা।
গত ২ আগস্ট সাতক্ষীরার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলা করেন সিদ্দিকুল ইসলাম। ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয় মুন্নীর লাশ। লাশ ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দেওয়ার আবেদন জানিয়ে মামলা করা হয় বলে জানান সিদ্দিকুল।
সংবাদ সম্মেলনে মুন্নীর স্বজনরা অভিযোগ করেন, মামলার খবর শুনে প্রতিপক্ষ এখন নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে আরো লাশ হতে হবে বলে শাসানো হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ কলেজের ছাত্রী মুন্নীর সঙ্গে এক বছর আগে বিয়ে হয় শিমুল গাজীর।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মুন্নীর স্বজনরা বলেন, ‘আমাদের মেয়ে মুন্নী খাতুনকে তার শ্বশুর ফরিদউদ্দিন প্রায়ই কুপ্রস্তাব দিত। এ কথা সে আমাদের জামাই শিমুল গাজী ও আমাদের কাছে জানিয়েছে কয়েকবার। গত ২৮ জুলাই দিনের বেলায় বাড়িতে অন্য কেউ না থাকার সুযোগে শ্বশুর ফরিদউদ্দিন আমাদের মেয়ের ওপর চড়াও হয়। এতে সে ঘোর আপত্তি জানায়। এ সময় তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে তার শ্বশুর।’
তাঁরা বলেন, ‘খবর পেয়ে শ্যামনগর উপজেলার উত্তর কদমতলার ওই বাড়িতে গেলে মুন্নীর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পাই। লাশের পা মেঝেতে পাতানো ছিল। ঘরের আড়ায় ওড়না দিয়ে ঝোলানো হলেও তার মাথার চুলের গোছা ছিল স্বাভাবিক। মনে হতেই পারে সে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দেখে সবাই বলেছেন, এ কেমন আত্মহত্যা। কেউ বিশ্বাস করেনি, এটা আত্মহত্যা হতে পারে।’
সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়েকে হারিয়ে আমাদের মাথা ঠিক ছিল না। পুলিশ একটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলে। পরে দেখি, ময়নাতদন্ত না করেই মুন্নীর লাশ নিয়ে দাফন করা হয়।’
সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, মুন্নীর এ মৃত্যুকে তাঁর সহপাঠী মুন্সীগঞ্জ কলেজের শিক্ষার্থীরা মেনে নেয়নি। তারা এলাকায় মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে তারা। তাঁর লাশ তুলে ময়নাতদন্ত করার দাবি জানিয়েছে সহপাঠীরা।
সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, মামলার পর শ্যামনগর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন বিশ্বাসের পরিচয় দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এএসআই লিটন বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘মৃত্যুর পর মেয়েটির সুরতহাল রিপোর্টসহ অন্য সব আইনি কাজ সম্পন্ন করা হয়। এরপর অভিভাবকদের কাছে জানতে চাওয়া হয় ময়নাতদন্তের বিষয়।’
এএসআই আরো জানান, কালীগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সার্কেল মো. সালাহউদ্দিন ও শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক মুন্নীর বাবা সিদ্দিকুলের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্দিকুল জানান, ময়নাতদন্ত করে কাটাছেঁড়ার দরকার নেই। তিনি এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র ও দেড়শ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে দেন। এর পরই ময়নাতদন্ত ছাড়াই কবর দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে সিদ্দিকুর বলেন, ‘এখন বুঝেছি ময়নাতদন্ত না করিয়ে ভুল হয়েছে। তবু লাশটি উত্তোলন করে তার ময়নাতদন্ত করা হোক। এতে প্রমাণিত হবে, মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। তাকে হত্যা করা হয়েছে।’
সিদ্দিকুর জানান, ঘটনার পর থেকেই মুন্নীর শ্বশুর ফরিদউদ্দিন, স্ত্রী মাহফুজা খাতুন ও ছেলে শিমুল গাজী পলাতক।