চোখ জুড়ানো শাপলা মেটাচ্ছে পেটের ক্ষুধা
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান ও শ্রীনগর উপজেলার খাল-বিলগুলোতে এখন শুধু শাপলা আর শাপলা। দেখলেই দুচোখ জুড়িয়ে যায়। এই জাতীয় ফুল শুধু চোখ জুড়াচ্ছে না, মেটাচ্ছে পেটের ক্ষুধাও। প্রতিদিন শাপলা সংগ্রহ ও বিক্রি করে ভালো টাকা আয় করছে দুই উপজেলার কয়েক শতাধিক বেকার কৃষক, জেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
শাপলা সংগ্রহকারী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাপলা নানান কাজে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে তরকারি হিসেবে এটি বেশ জনপ্রিয়। শাপলার ডাটা বেশ সুস্বাদু। আর এই শাপলা বিক্রির জন্য কোনো পুঁজিরও প্রয়োজন হয় না। আষাঢ় থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত সিরাজদিখান ও শ্রীনগর উপজেলার খাল-বিল ও নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে থাকে। এই সময় সেখানে আপনা-আপনি শাপলা ফুটে ওঠে। খাল-বিল ছাড়াও বর্ষায় ডুবে যাওয়া ধান, পাট ও ধঞ্চে ক্ষেতে দেখা মেলে শাপলার।
এদিকে বর্ষার এই মৌসুমে চার থেকে পাঁচ মাস কৃষি জমি পানির নিচে থাকায় কৃষকদের হাতে কোনো কাজ থাকে না। কৃষকদের পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন বয়সী ও পেশার মানুষ এই মৌসুমে শাপলা কুড়িয়ে তা বিক্রি করে সংসারের খরচ জোগাচ্ছে।
ওই শাপলা ঘিরে কোথাও কোথাও বসছে হাট। তেমনি বাড়ি বাড়ি ফেরি করেও বিক্রি হচ্ছে শহরসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
শাপলা সংগ্রহকারীরা ভোরে নৌকা নিয়ে ডুবে যাওয়া জমিতে ও বিলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শাপলা তুলতে থাকে। কয়েকজন শাপলা সংগ্রহকারী জানান, এ সময়ে একেকজন কমপক্ষে ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ মুঠো (৭০-৮০ পিছ শাপলায় ১ মুঠো ধরা হয়) সংগ্রহ করতে পারেন। দিন শেষে তাঁদের ৪০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা আয় হয়। বছরের চার মাস এ কাজ করেন তাঁরা।
সিরাজদিখানের লতব্দী ইউনিয়নের চর নিমতলার বিল থেকে শাপলা সংগ্রহকারী মো. কাউসার জানান, এ সময় একেকজন কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ মুঠো শাপলা সংগ্রহ করতে পারে। পাইকাররা তাদের কাছ থেকে এসব শাপলা সংগ্রহ করে। সিরাজদিখানের রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ তালতলা, হাঁসাড়া, ছনবাড়ীর মোড় ও আড়িয়াল বিলের পাশে শাপলার পাইকারি ক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। পাইকাররা এখান থেকে শাপলা কিনে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারে বিক্রি করে।
পাইকারি ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে একমুঠো শাপলা ২০ টাকা দরে কেনেন তাঁরা। তারপর গাড়ি ভাড়া গড়ে এক টাকা, শ্রমিক মজুরি এক টাকা, আড়ত খরচ দুই টাকাসহ এক মুঠো শাপলার জন্য মোট ২৭ থেকে ২৮ টাকা খরচ পড়ে। যাত্রাবাড়ী আড়তে তা বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা মুঠো।
যোগাযোগ করা হলে মুন্সীগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর জানান, শাপলা আসলে কোনো কৃষিপণ্যের আওতাভুক্ত নয়। এটি প্রাকৃতিকভাবে কৃষি জমি, পুকুর বা ডোবাতে জন্ম নেয়। তাই এই বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোনো পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠে না। তবে কৃষকদের সহায়তা করার জন্য শাপলা বেশি দিন সংরক্ষণ করার পদ্ধতি সম্পর্কে তাঁরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।