নগরকান্দায় ড্রাগন ফলের চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে
জনপ্রিয় উচ্চফলনশীল ও প্রচুর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এবং উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এ এলাকার কৃষকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ড্রাগন ফলের চাষ। ড্রাগন ফলের দাম ও চাহিদা ভালো থাকায় ড্রাগন ফলের চাষ ছড়িয়ে পড়ছে এলাকার সর্বত্র। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও এর নিকটবর্তী অঞ্চলের ক্যাকটাস প্রজাতির বিদেশি ওই ফলগাছ বাংলাদেশে চাষ করা খুবই উপযোগী হওয়ায় ব্যাপক হারে ড্রাগন ফল চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
নাতিশীতোষ্ণ ও উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের জলবায়ু ড্রাগন ফল চাষ করার জন্য খুবই ভালো হওয়ায় ফরিদপুরের নগরকান্দায় এটি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। উচ্চফলনশীল, প্রচুর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও বাজারে দাম বেশি থাকায় কৃষকরা এগিয়ে আসছে ড্রাগন ফল চাষে। এ এলাকায় উন্নত জাতের লাল ড্রাগন ফল (সাদা শাঁস) ও লাল ড্রাগন ফল (রঙিন শাঁস) বেশি চাষ হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ উপজেলায় পরীক্ষামূলক ভাবে ড্রাগন ফল চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলার লক্ষে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের বিনামূল্যে উপকরণ ও প্রাথমিক খরচ এবং পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশুতোষ কুমার বিশ্বাসের সার্বিক সহায়তায় উপজেলার ১৫ জন কৃষক জনপ্রতি ১০ থেকে ২৫ শতাংশ জমিতে বর্তমানে নগরকান্দায় ড্রাগন ফলের চাষ করছে। এ ছাড়া বসতবাড়ির আঙিনায়, ভবনের ছাদে অনেকেই ড্রাগন ফলের চাষ করছেন।
তিনি জানান, যেসব জমিতে পূর্ণ সূর্যালোক পায়, বর্ষায় পানি উঠে না বা স্যাঁতস্যাঁতে থাকে না এমন স্থানে ড্রাগন ফলের চাষ করা হয়েছে। বাগান করার মাত্র নয় মাসের মধ্যে গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে। বর্তমানে এক একটি ফলের ওজন ২০০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে দেখা গেছে। তবে চার-পাঁচ বছর বয়সের একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে এক কেজি পর্যন্ত ওজনের ড্রাগন ফল পাওয়া সম্ভব হবে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে বছরে ৮০ কেজি পর্যন্ত ফলন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উপযুক্ত পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা থাকলে একটি গাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে।
নগরকান্দায় উৎপাদিত ড্রাগন ফল বিক্রি করে কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছে। প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা দরে জমি থেকেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুবই মিষ্টি ও টক-মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন ফলে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা ও প্রসাধনী গুণ থাকায় এর ব্যাপক চাহিদা দেখা যাচ্ছে।
চিকিৎসকদের মতে, ড্রাগন ফলে প্রচুর আঁশ থাকায় হজম শক্তি বাড়াতে এবং চর্বি কমাতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত ক্যারোটিন থাকায় স্মৃতি শক্তি ও চোখের জ্যোতি বাড়ায়। ভিটামিন বি-২ থাকায় ক্ষুধা বাড়ায়, স্বাভাবিক কর্ম স্পৃহা উন্নত করে এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়। বি সিটোস্টরেল থাকায় হাইপার টেনশন কমায়। ত্বকের মসৃণতা ও আর্দ্রতা ধরে রাখে। ভিটামিন বি-৩ থাকায় শরীরের রক্ত প্রবাহ বাড়ায়, খারাপ কলেস্টোরোল ও রক্ত চাপ কমায়। রক্তের শিরা প্রশস্ত করে এবং মাইগ্রেনের ব্যথা কমায়।
ড্রাগনের সাদা শাঁসের রস প্রসাধন গুণের আঁধার। ড্রাগন ফলের রস দিয়ে তৈরি প্রসাধনী ব্যবহার করলে স্বাভাবিক বার্ধক্য বিলম্বিত করে, ত্বকে ভাঁজপড়া বন্ধ হয়, ত্বকের রেখা ও কুচকানো দাগ মুছে লাবণ্যতা বৃদ্ধি করে। ড্রাগন গাছের কচি ডগা বা কাঁচা ড্রাগন ফলের পেস্ট মুখ ও ত্বক পরিচর্যায় খুবই উপকারী।
উপজেলার তালমা ইউনিয়নের সন্তসী গ্রামের কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পরীক্ষামূলকভাবে নগরকান্দায় ড্রাগন ফল চাষ করে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, এ এলাকার আবহাওয়ায় ড্রাগন ফল চাষ করা খুবই উপযোগী। উচ্চফলনশীল ও লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা ব্যাপক হারে ড্রাগন ফল চাষে উৎসাহিত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশুতোষ কুমার বিশ্বাস আরো জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় উপজেলার কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বিনামূল্যে উপকরণ, প্রাথমিক খরচ প্রদান করে ড্রাগন ফল চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ড্রাগন ফল চাষে এ উপজেলার আবহাওয়া খুবই উপযোগী হওয়ায় পরীক্ষামূলক চাষ করে আমরা ব্যাপক সফলতা পেয়েছি। আশা করছি কয়েক বছরের মধ্যে আমরা ড্রাগন ফল চাষে বাংলাদেশের মডেল হতে পারব।