ফরিদপুরে পানির অভাবে চরম বিপাকে পাটচাষিরা
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মোট আয়তন ১৮৫.১১ বর্গকিলোমিটার। কৃষকের চাষাবাদের জমির পরিমাণ ১৩ হাজার ৬৭৫ হেক্টর। এখানে ৩০ হাজার ১২২টি কৃষি পরিবার রয়েছে। এ বছরে ১১ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। পানির অভাবে পাট কাটা ও পচানো নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, এ বছরে পাটের যে ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তাতে প্রত্যেক পাটচাষির মুখে হাসি ফুটে উঠবে। কিন্তু নদী-নালা, খাল-বিলে পানি না থাকায় চাষিরা পাট পচানো নিয়ে চরম বিপাকের মধ্যে পড়েছেন। পাট নিড়ানি থেকে বাছাই পর্যন্ত আবহাওয়া পাটচাষিদের অনুকূলে ছিল। বর্তমানে উপজেলার কোথাও কোনো পানি না থাকায় সকল পাটচাষি চিন্তায় পড়ে গেছেন। পানি ছাড়া পাটের লাবণ্য নষ্ট হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে পাট বিক্রি হবে। এতে পাটচাষিদের ক্ষতি হতে পারে। আর যদি পানি উন্নয়ন বোর্ড, ফরিদপুর চুনারুঘাট স্লুইসগেটটি দু-একদিনের জন্য ছেড়ে দেয়, তাহলে কুমার নদ দিয়ে এই উপজেলার প্রায় জমিতে পানি আসত। স্লুইসগেট বন্ধ রাখার জন্য পাট পচানো নিয়ে চাষিদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা এলাকার পাটচাষিরা বলেন, ‘আগের চেয়ে এ বছরে পাটের দ্বিগুণ ফলন হবে। তবে পানির অভাবে আমাদের পাট কাটা ও পচানোতে সমস্যা হচ্ছে। ক্ষেত থেকে পাট কেটে বোঝা বেঁধে ভ্যানে অথবা মাথায় করে নিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পচানো হচ্ছে। এতে পাট কালো হয়ে যাচ্ছে। আর যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড পানির ব্যবস্থা করে, তাহলে পাট পচানো সহজ হতো। পানি থাকলে চাষিরা পাট ক্ষেতেই পচানোর কাজ শেষ করতে পারতেন। তাতে পাটের লাবণ্যতাও ফিরে আসত। আর বাজারে অধিক মূল্যে পাট বিক্রি করা যেত। পাশাপাশি পাটকাঠিরও কদর বাড়ত। এতে পাটচাষির মুখে হাসি ফুটে উঠত।’
এদিকে একই সমস্যা ভোগ করতে হচ্ছে মধুখালী উপজেলা ও সদর উপজেলার কিছু ইউনিয়নে। এসব এলাকায় পানির অভাবে চাষিরা তাঁদের পাট জাগ দিতে পারছেন না সময়মতো।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ জি এম আবদুর রউফ বলেন, ‘এবার পাটের বাম্পার ফলন হচ্ছে। পানি হলে পাটচাষিরা সুন্দরভাবে পাট পচানো ও আঁশ ছাড়ানোর কাজ শেষ করতে পারতেন। পাটের লাবণ্যতার জন্য, পানির অভাব হলে প্রাকৃতিক পদ্ধতি রিবোন বেটিংয়ের মাধ্যমে পাট পচানো যেতে পারে। এর জন্য আমরা বিষয়টি ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানাব। কারণ, চাষিরা যদি পাট কাটা থেকে আঁশ ছাড়ানোর কাজ ঠিকঠাক মতো শেষ করতে পারে, তাহলে হেক্টরপ্রতি ২ দশমিক ৬ টন ফলন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’