জঙ্গিরাও বিলুপ্ত হবে : আইজিপি
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, দেশে এখন জঙ্গিবাদ একটু মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এরা থাকবে না। অতীতে এমন অনেক অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, তারা টিকতে পারেনি। সর্বহারা, লালপতাকা সবই দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে, জঙ্গিরাও হবে।
গতকাল শুক্রবার রাতে রাঙামাটিতে কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আইজিপি।
এ সময় কোনো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) যদি কমিউনিটি পুলিশিং না করেন, তিনি ওই থানায় আর থাকবেন না বলে সতর্ক করে দেন আইজিপি।
রাঙামাটির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে রাঙামাটি জেলা পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম এ সমাবেশের আয়োজন করে।
কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. মাহাববুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলার সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শফিকুল ইসলাম, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন ও পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান।
অনুষ্ঠানে আইজিপি শহীদুল হক বলেন, সরকার, প্রশাসন ও জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদের মূল উৎপাটন করবে। যে মতবাদ জনগণ গ্রহণ করে না, তা কখনই সমাজে টিকে থাকতে পারে না। বিগত সময়ে পুলিশ তাদের রক্ত দিয়ে দেশ ও জনগণকে রক্ষা করেছে, বর্তমানেও করছে, আগামীতেও করবে। দেশের প্রয়োজনে ১৯৭১ সালে প্রথম পুলিশের অস্ত্রই গর্জে উঠেছিল।
কমিউনিটি পুলিশিং সম্পর্কে আইজিপি বলেন, ‘কোন এলাকা কেমন হবে, তা ঠিক করবে এলাকার জনগণ, পুলিশ তাদের সহযোগিতা করবে। আর এটা একমাত্র কমিউনিটি পুলিশিং দ্বারাই সম্ভব। শুধু এলাকার মানুষই জানে কোন লোকটা কেমন, এ কমিটিগুলো পুরোপুরি কার্যকর হলে সমাজে আর কোনো অপরাধ থাকবে না। তবে কমিটি গঠনের সময় সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি কমিটিতে স্থান না পায়। সমাজে গ্রহণযোগ্যতা নেই, এমন লোক যদি দায়িত্বে আসে তাহলে সাধারণ জনতা তাদের কাছে যাবে না, আর আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না। যদি এমন লোক কমিটিতে ঢুকে থাকে তাদের বাদ দিয়ে নতুন করে কমিটি গঠন করতে হবে।’
শহীদুল হক বলেন, পার্বত্য এলাকার কথা মাথায় রেখে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ছকের বাইরে এসে প্রথাগত প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যদি কমিটিতে প্রথাগত প্রতিনিধিরা বাদ পড়ে থাকেন অবশ্যই তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করবেন। আর কোনো ধরনের অভিযোগ থাকলে সরাসরি আমার সেলফোনে কল করবেন। আমি না ধরলে একটা এসএমএস করবেন। অবশ্যই আমি আপনাদের কল করব।’
সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, এই এলাকার মানুষ শান্তিপ্রিয়। এখানে কমিউনিটি কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম কাজ করছে। তবে একে আরো গতিশীল করতে হবে। এ অঞ্চলে গুজব একটি বড় সমস্যা। গুজবে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটে যায়। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য পুলিশিংকে কাজে লাগাতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলে কর্মকর্তা পাঠানোর আগে বিশেষ অঞ্চলের কারণে ওরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে এ অঞ্চলে পাঠানোর আহ্বান জানান তিনি।
সংসদ সদস্য আরো বলেন, পুলিশ নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে বিকৃত মানসিকতার কোনো লোক এ বাহিনীতে ঢুকতে না পারে। একজনের অপকর্মের দায় পুরো বাহিনীকে বহন করতে না হয়।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কমিউনিটি সিদ্ধান্ত নিবে সমাজ কেমন হবে, কীভাবে চলবে, পুলিশের দায়িত্ব হবে সেভাবে গড়ে দেওয়া। সমস্যা সমাধানে নিজেরা উদ্যোগ নেবেন। সমাধান না হলে পুলিশকে জানাবেন। আপনারা সমঝোতার চেষ্টা করবেন। কিন্তু কখনই বিচার করবেন না। বিচার করতে গেলে নতুন করে সমস্যা তৈরি হবে, বিচার করবেন আদালত।’
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাই কুচক্রী মহল এই অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে এসব হামলা চালাচ্ছে। কমিউনিটি পুলিশিং একমাত্র মাধ্যম, যার মাধ্যমে এদের প্রতিহত করা সম্ভব। এটি সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত, এর মাধ্যমে রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন রাঙামাটি পৌরসভার কাউন্সিলর কালায়ন চাকমা, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান কাজী নজরুল ইসলাম, সাবেক কাউন্সিলর রোখসানা বেগম প্রমুখ।