৫ মাসের শিশু পেল পিতৃপরিচয়
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও থানা পুলিশের উদ্যোগে মাদারীপুরের শিবচরের পাচ্চরে পাঁচ মাস বয়সী এক শিশু পেল তার পিতৃপরিচয়।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় বিয়ের আসর থেকে বর জলিলকে আটক করতে পারায় নির্যাতনের শিকার মেয়ে পেয়েছে স্বামীর পরিচয়, শিশুটি পায় পিতৃপরিচয় আর নববধূ সজ্জিত আরেক মেয়ে বেঁচে গেলে প্রতারণা থেকে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পাচ্চর ইউনিয়নের গোয়ালকান্দা গ্রামের পিতৃহীন এক মেয়ের সঙ্গে প্রায় দেড় বছর আগে একই এলাকার রাজমিস্ত্রী আবদুল জলিলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের সম্পর্কের রেশ ধরে একসময় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন মেয়েটি। মেয়েটি জলিলকে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে বিয়ে করতে বলেন। কিন্তু জলিল আজ-কাল করে ধীরে ধীরে মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পাঁয়তারা করেন। এলাকায়ও বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়ায় মেয়েটি ও তাঁর পরিবার লজ্জায় এলাকায় মুখ দেখাতে বিব্রত বোধ করে। মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হাওলাদারকে বিষয়টি জানানো হয়। চেয়ারম্যান ছেলে ও তাঁর পরিবারকে মেয়েটির সঙ্গে বিয়ে করার জন্য চাপ দেন। কিন্তু ধর্মীয় রীতিতে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বিয়ে করা যায় না বলে সন্তান প্রসবের অপেক্ষায় থাকে মেয়েটির পরিবার। এরপর প্রায় পাঁচ মাস আগে ফুটফুটে একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন মেয়েটি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তখন মেয়েটিকে জলিলের বিয়ে করার কথা। কিন্তু তখন থেকে পালিয়ে বেড়ান জলিল।
গত বুধবার জলিল ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধা গ্রামের একটি মেয়েকে গোপনে বিয়ে করার জন্য বর বেশে যান। বিষয়টি জানতে পেরে পাচ্চর ইউপির চেয়ারম্যান দেলোয়ার হাওলাদার রাতেই শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেনকে জানান। ওসির নির্দেশে শিবচর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ইমরান ও এএসআই আকরামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ও ইউপি চেয়ারম্যান স্থানীয় কালামৃধা গ্রামে অভিযান চালান। তাঁরা বিয়ের আসর থেকে জলিলকে আটক করেন।
পরে আজ শুক্রবার বিকেলে উভয় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ইউপি চেয়ারম্যানের পাচ্চর কার্যালয়ে জলিলের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। আর এই বিয়ের কারণে পাঁচ মাসের ছোট্ট শিশু পেল তার পিতৃপরিচয়।
মেয়েটি বলেন, ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে লজ্জায় ঘর থেকে বের হতে পারতাম না। আজ এই বিয়ের কারণে আমি পেলাম স্বামী ও সংসার। আর আমার সন্তান পেল তার পিতৃপরিচয়।’
পাচ্চর ইউপির চেয়ারম্যান দেলোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘এলাকার এমন একটি ঘটনা জানার পর থেকে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম বিয়ের মাধ্যমে এই লজ্জাকর সমস্যার সমাধান করব। আজ ছেলে-মেয়ে দুটির বিয়ে সম্পন্ন করাতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’
শিবচর থানার এএসআই ইমরান আহমেদ বলেন, ওসির নির্দেশক্রমে কালামৃধার গ্রামে বিয়ের আসর থেকে জলিলকে আটক করা হয়। পরে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এই বিয়ে হয়।