স্বামীকে চোরাকারবারি সাজিয়ে গুলি করার অভিযোগ গৃহবধূর
নির্দোষ স্বামীকে অস্ত্র চোরাচালানি সাজিয়ে পুলিশ পায়ে গুলি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন এক গৃহবধূ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আহত কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সদস্য ও যুবলীগ নেতা রমজান আলীর স্ত্রী বুলবুলি খাতুন।
বুলবুলির অভিযোগ, এ ষড়যন্ত্রের পেছনে যারা তারাই অস্ত্রের ব্যবসা করে। এখন তাঁর স্বামীর পায়ে পচন ধরেছে। যথাযথ চিকিৎসা না পেলে তাঁর পা কেটে ফেলতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
দুই শিশু সন্তান রাব্বি ও রাখি, দেবরের স্ত্রী সুফিয়া খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বুলবুলি আরো বলেন, তাঁর স্বামীর নামে কখনো কোথাও অপরাধের মামলা ছিল না, নেইও। দিনভর ভ্যান চালিয়ে গত ১৩ জুলাই রাতে বাড়ি ফেরার পর কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কলারোয়া থানা পুলিশ তাঁর পায়ে গুলি করে।
বুলবুলি খাতুন বলেন, স্বামী রমজান আলী একজন দিনমজুর। অন্যের জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদ ও মাছের চাষ করতেন তিনি। ২০১৫ সালে মাছ চাষ করতে রায়পুর গ্রামের শফিকুলের ফিডের দোকান থেকে মাছের খাদ্য কিনে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নেন। এ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় শফিকুল তাকে নানাভাবে গালাগাল করতেন এবং পুলিশ দিয়ে শায়েস্তা করার হুমকি দিতেন।
গৃহবধূ বলেন, রমজান আলী বেসরকারি সংস্থা সুশীলনের কাছ থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা ঋণ নেন। এ টাকা নিয়ে বাড়ি আসার পথে পাওনাদার শফিকুল ও তাঁর সহযোগী একড়া গ্রামের শহিদুল, রায়পুরের শাহেদ হোসেন রাশেদ ও তাজউদ্দিন কেড়ে নিয়ে অবশিষ্ট টাকার জন্য তাকে ঘরে আটকে রাখেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য সাজ্জাদ হোসেন টাকা পরে পরিশোধের কথা বলে তাঁকে মুক্ত করে দেন।
বুলবুলি আরো জানান, এই টাকা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন রমজান। এরপর ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প ’ থেকে আরো ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত ভ্যান কেনেন তিনি। এ ভ্যান চালিয়ে তিনি সংসার নির্বাহ করেন বলে জানান বুলবুলি।
রমজান একজন নিরপরাধ ব্যক্তি এবং ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি উল্লেখ করে বুলবুলি বলেন, গত ১৩ জুলাই রাত ১০টার দিকে শাহেদ হোসেন রাশেদ, শফিকুল ইসলাম , শহিদুল ইসলাম ও তাজউদ্দিনকে পুলিশ একটি রিভলবারসহ আটক করে। পরে ঘরচালা গ্রামের কবির হোসেন ও শাহিন হোসেনকেও একই কারণে আটক করে। তাঁদের দিয়ে তাঁর স্বামীকে মোবাইল ফোনে কল করে যাত্রী আছে বলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এ সময় সেখানে উপস্থিত কলারোয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) পিন্টু লাল তাঁকে আটক করেন। মধ্যরাতে তাঁকে কলারোয়া উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের একড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে যান তাঁরা। এ সময় তাঁকে গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখেন। চোখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে পায়ের মাংসপেশিতে কাঁচের টুকরো রেখে গুলি করা হয়। কবির হোসেন ও শাহিনকে এ ঘটনার সাক্ষী বানিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেন এসআই পিন্টু লাল।
স্বামী রমজানকে প্রথমে সাতক্ষীরা হাসপাতাল ও পরে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুলবুলি বলেন, ‘তাঁর পায়ে এখন পচন ধরেছে। কেউ ওষুধপথ্য দিচ্ছে না। ধার-দেনা করে সাত হাজার টাকা দিয়েছি অপারেশনের জন্য।’
লিখিত বক্তব্যে বুলবুলি বলেন, একড়া গ্রামের শহিদুল অস্ত্র চোরাচালান মামলায় জেল খেটে জামিনে বাড়ি এসেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন মামলা আছে। তাঁর বাড়িতে নিত্য উঠাবসা কলারোয়া থানার এসআই পিন্টু লালের। সেখানে খাওয়া-দাওয়াও করেন। এ সুযোগে পুলিশকে ম্যানেজ করে ভুল তথ্য দিয়ে শহিদুল তাঁর সহযোগী শফিকুল, শাহেদ হোসেন রাশেদ ও তাজউদ্দিন তাঁর স্বামী রহমানকে আটক করান বলে জানান তিনি। রমজানের বিরুদ্ধে কোথাও কোনো মামলা তো দূরে থাক, সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) নেই বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে এসআই পিন্টু লাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
বুলবুলি বলেন, ‘খুলনায় স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে পুলিশ খালি টাকা চায়। না দিলে আবারও গুলি করার ভয় দেখায়’। যথাযথ তদন্ত করে দায়ী পুলিশ সদস্য ও অন্যদের শাস্তি দাবি এবং রমজানের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন তিনি।