চাহিদা মিটিয়ে সাতক্ষীরার মাছ যাচ্ছে বিদেশে
মৎস্য উৎপাদনে নীরব বিপ্লব চলছে সাতক্ষীরায়। জেলার জনগোষ্ঠীর চাহিদা মিটিয়েও অতিরিক্ত প্রায় ৮৭ হাজার মেট্রিক টন মাছের উৎপাদন হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে সাতক্ষীরার মাছ।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেওয়া হয়। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হিমায়িত খাদ্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। আর এর পেছনে সাতক্ষীরার অবদান অনেক বেশি।
সংবাদ সম্মেলন জানানো হয়, জেলায় মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় উপযোগিতাও বেড়েছে। আগে মাথা প্রতি ২০ থেকে ৩০ গ্রাম মাছ ব্যবহার হলেও এখন মাথা প্রতি দৈনিক গড়ে ৫৬ গ্রাম মাছ ব্যবহার করছে সাতক্ষীরার ২২ লাখ মানুষ।
বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাতক্ষীরার চিংড়ি বিদেশে রপ্তানির বাজার দখল করেছে। এখানে উৎপাদিত হচ্ছে সব ধরনের সুস্বাদু সাদা মাছ।
কৈ , মাগুর , শিং, শোল, পাঙ্গাস, মনোসেক্স তেলাপিয়া ছাড়াও জেলাব্যাপী কাঁকড়া ও কুচিয়ার চাষ ছড়িয়ে পড়েছে। জেলার ৫৫ হাজার বাগদা চিংড়ি ঘের ও ১২ হাজার গলদা চিংড়ি ঘেরের এক চতুর্থাংশে আধা নিবিড় ও নিবিড় চিংড়ি চাষ করা গেলে জেলার চিংড়ি উৎপাদন ৮ থেকে ১০ গুণ বেড়ে যাবে বলে জানানো হয়। বেসরকারি হিসাবে বাগদা ও গলদা চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা আরো বেশি। এসব ঘেরের মিষ্টি পানিতে ধান ও মাছ এক সাথে চাষ করা গেলে সাতক্ষীরায় মৎস্য উৎপাদনে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হতে পারে বলেও জানানো হয়।
আয়োজকরা জানান, জেলায় প্রতিবছর গড়ে এক লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। জেলায় মাছের চাহিদা ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত ৮৭ হাজার মেট্রিক টনের মধ্যে একাংশ বিদেশে রপ্তানি এবং অবশিষ্ট মাছ দেশের অন্যান্য এলাকায় পাঠানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় জেলায় বাগদা ও গলদা পোনার চাহিদা প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি। কক্সবাজারে প্রতিষ্ঠিত হ্যাচারিগুলো এই চাহিদা মিটিয়ে থাকে। এ ছাড়া কক্সবাজার থেকে সড়ক পথে সাতক্ষীরায় পোনা পৌঁছাতে সময় লাগে সর্বনিম্ন ২২ ঘণ্টা। এতে মাছের মৃত্যুহার বেশি হয়। বিমানে আনা হলে খরচ পড়ে পাঁচ লাখ টাকা। এসব হিসাব তুলে ধরে আয়োজকরা জানান, হেলিকপ্টারে পোনা আনা গেলে খরচ অনেক কম পড়বে। এতে উৎপাদন খরচ হ্রাস পাবে। অপরদিকে মাছের মৃত্যু হারও কমে যাবে ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মৎস্য খাতকে আরো উন্নত করে তুলতে জেলার ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ জমির মালিককে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের মাছ চাষে আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। অপরিকল্পিত চিংড়িঘের না করার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় এতে পানি নিষ্কাশনের অভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রি আফতাবউজ্জামান । এতে আরো বক্তব্য দেন জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মো. হাবিবুর রহমান , জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ, হ্যাচারি মালিক সিরাজুল ইসলাম, মৎস্য খাদ্য ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম ধোনি , মৎস্য চাষি মো. আনিসুর রহিম প্রমুখ।