গুলশানে হামলা, বিদেশি পর্যটক নেই সুন্দরবনে
বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে এবারের ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সুন্দরবনের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের ভিড় দেখা গেছে। তবে গতবারের তুলনায় এবারের ভিড় তুলনামূলক অনেক কম। আর বিদেশি পর্যটক নেই বললেই চলে।
রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি নামের রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসীদের হামলায় দেশি-বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় বিদেশি পর্যটকরা এবার সুন্দরবন ভ্রমণে তেমন উৎসাহিত হননি বলে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের করমজল, হাড়বাড়িয়াসহ কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্রে ঈদের আগের দিন থেকে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। ঈদের দিন ও পরের দিন এই সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। বন বিভাগের নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধসহ পাস পারমিট নিয়ে দর্শনার্থীদের সুন্দরবনে বিচরণ করতে হয়। সুন্দরবনের বাঘ, কুমির, বানর, বিষধর সাপ, হিংস্র প্রাণীর দর্শনলাভের প্রত্যাশায় সুন্দরবনে ভ্রমণে আসেন অসংখ্য পর্যটক। দর্শনার্থীদের পদচারণে প্রাকৃতিক লীলাভূমি সুন্দরবন কোলাহলমুখর হয়ে ওঠে। সুন্দরবনের পর্যটন স্পট করমজলে পর্যটকদের ভিড় সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ঈদের পরে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সুন্দরবনে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা দুর্লভ বন্য প্রাণীর দর্শন পেতে ট্যুরিস্ট বোট নিয়ে ছুটে আসে পর্যটনকেন্দ্র করমজলে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল পর্যটন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জার আবদুল মান্নান বলেন, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও নদীর ঢেউ উপেক্ষা করেও ঈদের ছুটিতে এবার পর্যটকের আগমন অনেকটা কম হয়েছে। তারপরও অসংখ্য পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণে আসেন। তবে বাবা-মায়ের সঙ্গে শিশুদের আগমন বেশি। সুন্দরবনে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে বনরক্ষীদের হিমশিম খেতে হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ কর্মকর্তা আরো বলেন, অন্যান্যবারের মতো বিদেশি পর্যটকদের ভিড় এবার চোখে পড়েনি। গুলশান হামলার ঘটনার কারণে বিদেশি পর্যটকরা এবার সুন্দরবন ভ্রমণে তেমন উৎসাহিত হয়নি।
এদিকে এবার ঈদকে টার্গেট করে পর্যটনভিত্তিক ব্যবসায়ীরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শহরের অধিকাংশ হোটেলের কক্ষই ছিল প্রায় ফাঁকা। বিপুলসংখ্যক ট্যুরিস্ট বোট থাকলেও অধিকাংশের তেমন ট্রিপ হয়নি। আর বিদেশি পর্যটক না আসায় বড় বড় ট্যুরিস্ট লঞ্চগুলো অলস সময় কাটিয়েছে।
মোংলার পর্যটন ব্যবসায়ী দ্য সাউদার্ন ট্যুরসের মালিক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, গত বছর ঈদে ২৫০ থেকে ৩০০ জন বিদেশি পর্যটক এসেছিল সুন্দরবনে। আর এ বছর মাত্র আটজন চীনা পর্যটক এসেছেন সুন্দরবনে।
মিজানুর রহমান বলেন, গুলশানে বিদেশি ও ঈদের দিন শোলাকিয়ায় মানুষ হত্যার কারণে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা নিরাপত্তাহীনতা ও যেকোনো ধরনের হামলার শঙ্কার জন্য সুন্দরবন ভ্রমণে আসেনি। পর্যটন ব্যবসায়ীদের লঞ্চ, ট্রলার, জালিবোট পর্যাপ্ত পর্যটকের অভাবে ঘাটে অলস পড়ে রয়েছে।
অপর ব্যবসায়ী সুন্দরবন লাইভ ট্যুরসের মালিক গোলাম রহমান বিটু বলেন, এবারের ঈদের ছুটিতে সাতজন জার্মানসহ মোট ১৩ জন বিদেশির সুন্দরবন ভ্রমণে আসার জন্য আগাম বুকিং ছিল। কিন্তু গুলশানে হামলার কারণে সেসব বিদেশি তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা বা বুকিং বাতিল করেছেন।
তবে এ বছর ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় দেশি পর্যটকের সংখ্যা মোটামুটি ভালো বলে মন্তব্য করেন গোলাম রহমান।