জলবায়ু পরিবর্তনে বিপুল উপকূলীয় মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা। তাঁরা জলবায়ু উদ্বাস্তুদের অধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশগুলোর কাছ থেকে অধিক ক্ষতিপূরণ আদায়েরও দাবি জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংগঠন ‘ন্যানসেন ইনিশিয়েটিভ’-এর সহযোগিতায় খুলনার একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত ‘জলবায়ু বাস্তুচ্যুতি’ বিষয়ক এক আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্মেলনে বক্তারা এ অভিমত তুলে ধরেন। তিন দিনব্যাপী এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের রোববার ছিল শেষ দিন। সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৪টি দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।
সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে একটি ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে শুধু দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের চার কোটি ছয় লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছে। সুতরাং বিষয়টি হালকা করে দেখার কোনো অবকাশ নেই।’
সকালে সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক, ন্যানসেন ইনিশিয়েটিভের অধ্যাপক ওয়াল্টার কাইলিন, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ফচ এবং বেসরকারি সংগঠন কোস্টাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল ট্রান্সফরমেশন ট্রাস্টের (সিওএএসটি) নির্বাহী পরিচালক রিয়াজুল করিম চৌধুরী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক রিয়াজ হামিদুল্লাহ সমাপনী অধিবেশন সঞ্চালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাস্তুচ্যুতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিপুলসংখ্যক মানুষ উপকূলীয় অঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এই সমস্যা স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। একই সঙ্গে এ জন্য দায়ী দেশের কাছ থেকে অধিক পরিমাণ ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।
পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক বলেন, তিন বছর আগে নরওয়ে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ চিহ্নিত করে আলোচনা শুরু করে। এ সম্মেলন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত অভিবাসীদের অধিকার সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। আগামী অক্টোবরে জেনেভায় মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এ সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়গুলো উত্থাপন করা হবে।
‘ন্যানসেন ইনিশিয়েটিভ’-এর অধ্যাপক ওয়াল্টার কাইলিন বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত এসব দুর্গত মানুষের বার্তা সারা বিশ্বে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই আমাদের এ উদ্যোগ।’
আন্তঃসরকার পর্যায়ের এ রকম উদ্যোগ জলবায়ু উদ্বাস্তুদের অধিকার রক্ষায় সঠিক কর্মপরিকল্পনা তৈরিতে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেন সুইস রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ফচ।
বক্তারা আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনগত অভিঘাতের কারণে সারা বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। কিন্তু এসব মানুষের অধিকার সুরক্ষায় আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো পর্যায়েই তেমন কোনো কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয় না। তাই এ-সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায় থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অভিবাসীদের অধিকার সুরক্ষায় এ-সংক্রান্ত সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নীতিমালা প্রণয়নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ সম্মেলন।