‘ফোন দিচ্ছি বলে কৃষ্ণা আর ফোন দেয়নি’

প্রতি রাতেই ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে খুলনায় বাবা কুমুদরঞ্জন মণ্ডলকে ফোন দিতেন কৃষ্ণা কাবেরী বিশ্বাস। গত সোমবার রাত ১০টার পরে কুমুদরঞ্জন মেয়েকে ফোন দেন। ফোন ধরে কিছু কথার পরই কৃষ্ণা তাঁকে বলেন, ‘বাবা, পাশের ঘরে কিসের যেন শব্দ হলো, আমি দেখি; ফোনটা রাখছি, মিনিট পাঁচেক পরেই আবার ফোন দিচ্ছি। কৃষ্ণা আর ফোন দেয়নি।’
পরে কুমুদরঞ্জন ফোন পান নাতনি শ্রুতির কাছ থেকে। শ্রুতি ভয়ার্ত কণ্ঠে কুমুদকে জানায়, ‘একটি লোক বাবাকে মেরে ফেলতে চাইছে। মা তাকে ঠেকানোর চেষ্টা করছে। আর ওই লোকটি মাকে দিয়ে একটি কাগজে সই করানোর চেষ্টা করছে; আর আঘাত করছে। মা, তাকে বলছে, আপনার স্যারকে আপনি কী খাইয়েছেন? তাঁকে মারছেন কেন? কিন্তু লোকটি এর কোনো উত্তর না দিয়ে মাকে হাতুড়ি দিয়ে মারছে।’
কৃষ্ণা কাবেরীর বাবা খুলনার ডুমুরিয়া কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কুমুদরঞ্জন মণ্ডল আজ শুক্রবার নিজ বাড়িতে এ কথা বলেন। উপজেলার ঘুটুদিয়া ইউনিয়নের পঞ্চু গ্রামে থাকেন অবসরপ্রাপ্ত এ অধ্যক্ষ। তিনি জানান, কৃষ্ণা কাবেরি বিশ্বাসের কাছ থেকে একটি কাগজে সই করার চেষ্টা করেছিল অতিথিবেশী খুনি। ‘ঘনিষ্ঠজনের’ বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত কোটি টাকার শেয়ার বিনিয়োগের কথা ঠিক নয় বলে দাবি করেন কৃষ্ণার বাবা।
গত সোমবার অতিথি বেশে এক ব্যক্তি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের কৃষ্ণাদের ফ্ল্যাটে ঢুকে হাতুড়িপেটা করে কৃষ্ণা কাবেরী বিশ্বাসকে (৩৫) হত্যা করে। বাসায় আগুনও ধরিয়ে দেয় ওই ব্যক্তি। কৃষ্ণা কাবেরী বিশ্বাস রাজধানীর আদাবরে মিশন ইন্টারন্যাশনাল কলেজের সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। এর আগে দুর্বৃত্তের দেওয়া খাবার খেয়ে অচেতন হয়ে হামলার শিকার হন কৃষ্ণার স্বামী বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রকৌশল বিভাগের উপপরিচালক সীতাংশু শেখর বিশ্বাস (৪৮)। দুর্বৃত্তের হামলায় দুই মেয়ে শ্রোভনা বিশ্বাস শ্রুতি (১৫) ও অদ্বিতীয়া বিশ্বাস (৮) আহত হয়।
মেয়েকে হারিয়ে ও মেয়ের পরিবারের এ অবস্থায় কুমুদরঞ্জন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আজ সকালে কুমুদরঞ্জনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বারান্দায় চেয়ারে বসে বাইরের দিকে আনমনে তাকিয়ে আছেন। এক স্বাস্থ্য সহকারী তাঁর রক্তচাপ পরীক্ষা করছিলেন। বাড়িতে স্বজনদের ভিড়।
কুমুদরঞ্জন অনেকটা স্বগতোক্তির মতো সোমবার রাতের কথাগুলো বলেন। তাঁর চোখ দুটি ছল ছল করতে থাকে। তখন বাড়িজুড়ে পিনপতন নীরবতা। হঠাৎ করেই তিনি বলেন, ‘মা যে আমার নেই, চলে গেছে, সে খবর ওরা কেউ আমাকে তখন জানায়নি।’ মেয়ে কৃষ্ণা অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল বলে তিনি জানান।
কুমুদরঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘কৃষ্ণার জামাই সীতাংশু অত্যন্ত সৎ কর্মকর্তা ছিল। দাপুটে কর্মকর্তা ছিল। ভয় পেতো না। চাকরি-বাকরি করে হয়তো দু-চার পয়সা কেউ এমনে দিতে পারে। কিন্তু ১৫ কোটি টাকা থাকা তো সম্ভব না। এত টাকা থাকলে ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার জন্য গ্রামের সব ফসলিজমি কেন বিক্রি করে দিল সে? তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে শেয়ার ব্যবসার যে ১৫ কোটি টাকার কথা আসছে, তা সঠিক নয়।’