মৌচাক মার্কেট ৬ সপ্তাহ খোলা রাখা যাবে

রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের দোকানপাট বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ ছয় সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। তাই আপাতত এই মার্কেটে দোকান-মালিকদের ব্যবসা পরিচালনায় কোনো বাধা নেই। তবে আদালত বলেছেন, এর জন্য দায়-দায়িত্ব ও ঝুঁকি দোকানিদের নিতে হবে।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে মৌচাক মার্কেট বণিক সমিতির পক্ষে করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার এই স্থগিতাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
বণিক সমিতির পক্ষে আদালতে শুনানি করেন এ এম আমিন উদ্দিন ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। আর আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোতাহার হোসেন।
এর আগে বুয়েটের প্রতিবেদনের আলোকে সংস্কার করা বা বিল্ডিং কোড অনুসারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সক্ষমতা সনদ না পাওয়া পর্যন্ত গতকাল সোমবার এসব দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব এবং রাজউক কর্তৃপক্ষকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলেন আদালত।
একইসঙ্গে দোকান খালি করতে কেন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, রাজউকের অথরাইজড কর্মকর্তাসহ সাত বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৭ মে রাজউক মৌচাক মার্কেটের ভবন মালিককে চিঠি দেয়। এতে বলা হয়, প্রাচীন এই ভবন বহুল ব্যবহৃত এবং প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। বর্তমানে ইমারতটি জীর্ণ ও দৃশ্যত ঝুঁকিপূর্ণ প্রতীয়মান হয়েছে। তাই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষা পূর্বক কাঠামোগত উপযুক্ততার সনদ গ্রহণ করে চাওয়া তথ্যাদি এই দপ্তরে (রাজউক) দাখিল করার জন্য অনুরোধ করা হলো। সেই সঙ্গে ভবনটির কাঠামোগত উপযুক্ততা নিশ্চিত হয়ে ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হলো।
বুয়েটের দেওয়া সুপারিশ পাওয়ার পর গত ২ মে রাজউক ভবন মালিককে আরেকটি চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, বুয়েট প্রণীত কাঠামোগত মূল্যায়ন প্রতিবেদনের পরামর্শ ও কর্তৃপক্ষের ওই নির্দেশনা সত্ত্বেও কাঠামোগত ঝুঁকি হ্রাসে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে দায়িত্বহীনভাবে মার্কেট ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে। যা জীবন ও সম্পদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিশেষ করে ভীতসহ কলামের ভার বহন ক্ষমতা তাৎপর্যপূর্ণভাবে অপ্রতুল ও ভূমিকম্প সহনশীল নয়।
এতে আরো বলা হয়, ভবনটি অবকাঠামোগত ও পরিবেশগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর হওয়ায় বর্ণিত সংস্কার না হলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় মার্কেটটির ব্যবহার বন্ধ করে বুয়েট প্রণীত নকশা মোতাবেক বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে অবিলম্বে কাজ শুরু করার জন্য পুনরায় নির্দেশ দেওয়া হলো। কাঠামোগত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ব্যবহারের দরুন যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে একমাত্র আপনিই (মালিক) এবং আপনার ব্যবস্থাপনা দায়ী থাকবে। সে কারণে ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২ অনুযায়ী যথাযথ আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এটি চূড়ান্ত নোটিশ বলে গণ্য হবে।’
এই নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জেড কে লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ভবন মালিক আশরাফ কামাল পাশা গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেন। যার ওপর রোববার ও সোমবার শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ ওই আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. রাজিউদ্দিন সারওয়ার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।
ঢাকার মালিবাগ এলাকায় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রিয় বিপণিবিতান মৌচাক মার্কেটে বিভিন্ন পণ্যের চারশর বেশি দোকান রয়েছে বলে জানা যায়।