যশোরে জোড়া খুন, চারজন গ্রেপ্তার

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার চাড়াভিটা এলাকায় আবদুল বারী ফিলিং স্টেশনে জোড়া খুনের ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন আবদুল বারী ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী নজেলম্যান সিরাজুল ইসলাম এবং চাড়াভিটা এলাকার বাসিন্দা নয়ন, ইকবাল ও নাসির।
গত রোববার রাতে আবদুল বারী ফিলিং স্টেশনে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ব্যবস্থাপক ওবায়দুর রহমান ও যশোর এমএম কলেজের ছাত্র লিজন আহমেদ অপুকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই রাতে সিরাজুলও ঘুমিয়ে ছিলেন। কিন্তু জোড়া খুনের ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।
পুলিশ গতকাল সোমবার গভীর রাতে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় এক আত্মীয়র বাসা থেকে সিরাজুলকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জোড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এরপর বাকি তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ সিরাজুলকে নিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কুড়াল উদ্ধার করা হয়। সাংবাদিকদের সামনে তিনি কুড়াল হাতে নিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেন।
পুলিশ জানায়, তেল চুরির টাকার ভাগ নিয়ে ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক ওবায়দুর রহমানের ওপর নজেলম্যান সিরাজুলের ক্ষোভ ছিল। আর রাতে ফিলিং স্টেশনে গাঁজা সেবনে বাঁধা দেওয়ায় ওবায়দুরের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন এলাকার নয়ন, ইকবাল ও নাসির। এ কারণে তারা চারজন রোববার রাতে ওবায়দুরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। কলেজছাত্র অপু তাদের টার্গেট ছিল না। ওইদিন রাতে অপু বাড়ির নির্মাণকাজ চলায় পেট্রল পাম্পে ঘুমাতে আসায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকারের পাশাপাশি নজেলম্যান সিরাজুল জোড়া হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া আরো তিনজনের নাম বলেছেন। নয়ন, ইকবাল ও নাসির নামের ওই তিনজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার বলেন, মূলত পেট্রল পাম্প থেকে টাকা চুরিচামারি করত। লোকজনকে কম তেল দিয়ে যে টাকা পেত তার ৮০ শতাংশ নিত ম্যানেজার। চুরির মূল কাজ সিরাজুল করলেও সে পেত ২০ শতাংশ। এ কারণে ম্যানেজারের ওপর সে ক্ষুব্ধ ছিল।
এদিকে আসামি গ্রেপ্তারের খবর শুনে নিহত কলেজছাত্র লিজন আহমেদের মা সাংবাদিকদের কাছে ছুটে আসেন। তিনি আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমি বিচার চাই। আমার তো আর সন্তান নেই, সোনা। আমারে মা কিডা বলবে। আমার আব্বারে আমি এমএ পাস করাইছি। আমার একটাই সন্তান। আর নেই। আমি কী করে থাকব।’
সন্দেহভাজন খুনি নাসির প্রসঙ্গে লিজনের মা বলেন, ‘এই নাসিররে আমি সেদিনও খাতি বলছি। বলতেছি, ভাত খাও। কয়, না কাকি আমি খায়ে আইছি। আমি ফাঁসি চাই তাদের। আপনাদের কাছে আমি ফাঁসি চাই। যা করলে ভালো হয় তাই। এই আমার আবদার।’