ফরিদপুরে ২ বছরের শিশুর লাশ উত্তোলনের নির্দেশ
ফরিদপুর সদরের সিঅ্যান্ডবিঘাট যৌনপল্লির বাসিন্দা মনি খানমের দুই বছরের মেয়ে মদিনার মৃতদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার ফরিদপুর সদর আদালতের বিচারিক হাকিম মো. মাসুদ আলী এ আদেশ দেন।
মনি খানম জানান, গত ২৫ মে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মদিনাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ওই পল্লির নিবাসী ছালেহা বেগমের ভাড়াটিয়া বন্যা (৪০), দোলনা (৩৫), বিউটিসহ (৩০) তাদের সহেযাগীরা। কিন্তু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মদিনার মৃত্যু হয়েছে এ কথা বলে তড়িঘড়ি করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার লাশ দাফন করা হয়।
এই ঘটনায় মনি খানম গত ২৭ মে ওই তিন নারী, বাড়িওয়ালি ছালেহা বেগম ও তার দুই ছেলে তুফান (২৫) ও আকাশকে (২০) আসামি করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন।
মনি খানম বলেন, বাড়িওয়ালি ছালেহার দুই ছেলে তুফান ও আকাশ নেশাগ্রস্ত। তারা নেশাজাতীয় সামগ্রী বিক্রি করে। কিছুদিন আগে আকাশ ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। এ ঘটনায় ছালেহা তাকে সন্দেহ করে এবং তার কোলশূন্য করে দেওয়ার হুমকি দেয়। গত ২৫ মে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বন্যা তার শিশু মেয়ে মদিনাকে কোলে করে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে এসে বন্যা জানায়, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মদিনার মৃত্যু হয়েছে। এ খবর শুনে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। ওই সুযোগে বন্যা ও তার সহযোগীরা তড়িঘড়ি করে সিঅ্যান্ডবি ঘাট এলাকার তহশিল অফিসের পাশে মদিনাকে কবর দিয়ে দেয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই যৌনপল্লির বাসিন্দা বিউটি বেগম (২২) বলেন, বন্যা মনির কাছ থেকে মদিনাকে নিয়ে একটি ঘরে গিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে তার শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাকা দেয়। পরে কারেন্টে শক খেয়ে মৃত্যু হয়েছে প্রচার করে মদিনার লাশটি মনির কাছে ফিরিয়ে দেয়। এ ঘটনা যেন আমি কাউকে না বলি এজন্য আমাকে শাসিয়ে দেন বন্যা।’
বেসরকারি শাপলা নারী সংস্থার সহযোগী সদস্য রুবি বেগম বলেন, দুই বছরের একটি শিশুর কী অপরাধ। অথচ তাকে হত্যা করা হলো। এ যৌনপল্লিতে মাঝে মধ্যেই শিশু হত্যার ঘটনা ঘটে। এ হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে হত্যার এ প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে।
শিশু মদিনা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বেল্লাল হোসেন বলেন, এ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামি বন্যা ও দোলনাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।
এসআই বেল্লাল জানান, কবর থেকে মদিনার লাশ তুলে ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন নির্বাহী হাকিমের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্তের জন্য মদিনার লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হবে।