অতিক্রম করল রোয়ানু, সাতক্ষীরায় স্বস্তি
অবিরাম বৃষ্টি ঝরিয়ে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু অতিক্রম করে সাতক্ষীরা উপকূল। আর এরই সঙ্গে শেষ হয় শ্বাসরুদ্ধকর ৪৮ ঘণ্টা। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন সাতক্ষীরার মানুষ।
তবে রোয়ানু দেশের অন্যান্য উপকূলীয় এলাকায় মৃত্যুর স্বাক্ষর রেখে গেছে। জলোচ্ছ্বাসে ছাপিয়ে দিয়েছে কয়েকটি জেলার জনপদ। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সাতক্ষীরায় দুদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি ঝরতে থাকে। শুক্রবার রাত থেকে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে।
আজ শনিবার সকাল থেকে ঝড়ো হাওয়া তীব্র হয়ে ওঠে। সুন্দরবন ও সীমান্তসংলগ্ন নদীগুলো হয়ে ওঠে উত্তাল। এরই সঙ্গে আতঙ্ক বেড়ে যায় জনমনে। সরকারি প্রচার যন্ত্র থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় শনিবার দুপুর নাগাদ সাতক্ষীরা অতিক্রম করবে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু। কিন্তু আবহাওয়াবিদদের সব ধারণা উল্টেপাল্টে দিয়ে রোয়ানু সাতক্ষীরা পার হয় সকালের দিকে। চারদিকে টলটল করা মেঘ, ঠান্ডা ঝড়ো হাওয়া, সেই সঙ্গে প্রকৃতির গুমট ধরা ভাব ক্রমেই বাড়তে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে জনমনে আতঙ্ক আরো দানা বাঁধে। তাদের মনে দাগ কাটে ১৯৮৮-এর ২৯ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের সিডর আর ২০০৯ সালের ২৫ মের আইলার দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংবাদকর্মীদেরও ছোটাছুটি বেড়ে যায়। অপরদিকে জেলা প্রশাসনও আরো বেশি তৎপর হয়ে ওঠে রোয়ানু মোকাবিলায় প্রতিরোধব্যবস্থা নিয়ে। দুপুর ১২টায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক আবুল কাসেম মো. মহিউদ্দিন সাতক্ষীরা রোয়ানুর আঘাতমুক্ত বলে ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘সকালেই রোয়ানু সাতক্ষীরা অতিক্রম করেছে।’
এদিকে রোয়ানুর সম্ভাব্য আঘাত মোকাবিলায় জেলায় নেওয়া হয় পর্যাপ্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। আইলা উপদ্রুত শ্যামনগরের গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ১১ হাজার গ্রামবাসীকে রাতেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। জেলার ১৩২টি সাইক্লোন শেল্টারের সবগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়। এ ছাড়া স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং সুবিধাজনক স্থানগুলো প্রয়োজনে জনস্বার্থে ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়। আশাশুনি, শ্যামনগরসহ সব উপজেলার ৭৮টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে মেডিকেল টিম প্রস্তুত করে রাখা হয়। এ দুই উপজেলায় প্রায় চার হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত ছিলেন। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় খাবার পানি, ওষুধপত্র, শুকনো খাবার এবং নৌকা ও ট্রলারসহ বিভিন্ন যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গ্রামে গ্রামে মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক রাখা হয়। তাদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। দুর্যোগকবলিত মানুষকে উদ্ধারে সব আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। শ্যামনগর ও আশাশুনিতে সবচেয়ে বেশি নজর রাখা হয়। রোয়ানুর আঘাত মোকাবিলায় বারবার মাইকিং করে তাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়।
এসব প্রস্তুতির মধ্যেই সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাসেম মো. মহিউদ্দিন জানান, রোয়ানু সাতক্ষীরা অতিক্রম করেছে। ততক্ষণে বিষণ্ণ বদনে স্বস্তির হাসি ফুটে ওঠে। শেষ হয় রোয়ানু জুজুর ভয়, যেমনটি হয়েছিল ২০১৩ সালের ফাইলিন ও একই বছরে মহাসেনের এবং ২০১৪ সালের নিলুফার ও ২০১৫-এর কোমেনের রক্তচক্ষুর ভীতি।