‘রোয়ানু’র প্রভাবে নিহত ২১
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে শুরু করেছে। এতে উপকূলীয় জেলায় সন্ধ্যার পর পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ১২ জন, ভোলা, নোয়াখালী ও কক্সবাজারে দুজন করে মোট ছয়জন এবং পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনীতে একজন করে তিনজন নিহত হয়েছে। এ সময় শতাধিক লোক আহত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটের। অনেক জায়গায় ফসল ভেসে গেছে।
ঝড়ের মূল অংশ আজ শনিবার দিনের শেষভাগে উপকূলে আঘাত হানে। সন্ধ্যার পর ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয় বলে আবহাওয়া কার্যালয় জানিয়েছে।
বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
আরিচ আহমদ শাহ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে সাতজন মারা গেছে। এ ছাড়া সীতাকুণ্ডু উপজেলা ও নগরীর হালিশহরে দুজন করে মোট চারজন এবং নগরীর শোলক বহর এলাকায় পানিতে পড়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সন্ধ্যার পর পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আজ শনিবার বিকেল ও সন্ধ্যার পর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে দুই দফায় সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। তিনি জানান, বিকেলে বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
বিকেলে হালিশহরে দুই ভাই পানিতে ভেসে গিয়ে মারা গেছে। তাদের মধ্যে একজনের লাশ পাওয়া গেছে।
এর আগে সকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় জঙ্গল ছলিমপুর এলাকায় ভূমিধসে মা ও ছেলে নিহত হয়েছে। এরা হলো কাজল বেগম (৪৫) ও তার ছেলে বেলাল হোসেন (১০)।
জেলা প্রশাসক আরো জানিয়েছেন, জেলায় ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
মো. মাসুদ পারভেজ, নোয়াখালী : নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলো উপজেলার হরণী সানন্দির আদর্শ গ্রামের মিনারা বেগম (৩৫) ও তার মেয়ে মরিয়ম নেসা (১০)।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হাসনাত মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন জানান, দুপুরে প্রবল জোয়ারে মা ও মেয়ে ভেসে যায়। এক ঘণ্টা পর নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়।
ইকরাম চৌধুরী টিপু, কক্সবাজার : জলোচ্ছ্বাসে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলায় দুজনের মৃত্যু হয়।
এর মধ্যে কৈয়ারবিল ইউনিয়নের মাস্টার ফয়েজুর রহমানের ছেলে ফজলুল হক (৫৫) দুই নৌকার মাঝখানে চাপা পড়ে প্রাণ হারান আর উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের আবদুর রহিমের ছেলে মো. ইকবাল (২৫) বসতবাড়ির মাটির দেয়াল চাপা পড়ে প্রাণ হারান।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আবুল কালাম আজদ, লক্ষ্মীপুর : সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের বাবলাতলী এলাকায় ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে আনোয়ার উল্লাহ (৬০) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। তিনি তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের মৃত বশির উল্লাহর ছেলে।
তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান হারুন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দুপুরে গাছচাপা পড়ে আহত হন আনোয়ার উল্লাহ। পরে তাঁকে জেলা শহরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
আফজাল হোসেন, ভোলা : ঘূর্ণিঝড়ে ঘর ভেঙে চাপা পড়ে ভোলায় দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে তজুমদ্দিন উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন তজুমদ্দিন এলাকার নয়নের স্ত্রী রেখা বেগম (৩৫) এবং একই এলাকার মফিজের ছেলে মো. আকরাম হোসেন (১২)।
ভোলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সেলিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওছমান হারুন মাহমুদ, ফেনী : ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া এলাকায় দুপুরে ঝড়ের সময় চর থেকে মহিষ আনতে গিয়ে নুরুল আলম (৩৫) নামে এক যুবক মারা গেছেন। এ সময় দুজন নিখোঁজ হয় বলে তাদের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।
বৃষ্টি ও তীব্র বাতাসের তোড়ে উপজেলায় অনেক কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানির স্রোতে চরচান্দিয়া, চর খোন্দকারসহ বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এলাকার অনেক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। জোয়ারের পানিতে পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, পটুয়াখালীতে অপর একজন নিহত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ আরো উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে এবং পরবর্তী চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।
বুলেটিনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে সাত নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।