পিস্তল, তিন নারীসহ সাংসদপুত্র আটক
মায়ের নামে লাইসেন্স করা পিস্তল, ৪৩টি গুলি ও তিন তরুণীসহ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্যের ছেলে সাফায়াত সরোয়ার রুমনকে আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের রিসোর্ট ‘বরসা’ থেকে রুমনকে আটক করা হয়। তাঁর মা রিফাত আমিন সংরক্ষিত মহিলা আসন ৩১২-এর সংসদ সদস্য।
এ ব্যাপারে রিফাত আমিন বলেন, ‘বিষয়টি এমন কিছু নয়। আমার ছেলে ওর কয়েকজন বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে বরসা রিসোর্ট এলাকায় গিয়েছিল। যাওয়ার সময় গাড়ি একটু জোরে চালানোয় পুলিশ রাতের সিগন্যাল দেয়। গাড়ি না থামানোয় রিসোর্টে গিয়ে গাড়িটি আটক করে। গাড়িটি সংসদ সদস্যের দেখতে পেরে পুলিশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। গাড়িতে থাকা অস্ত্রটি আমার নামে লাইসেন্স করা। ভুল করে অস্ত্রটি গাড়িতে থেকে যাওয়ায় ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি বলেন, মেয়ে তিনটি তাঁর আত্মীয়। পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে।
তবে পুলিশ জানিয়েছে, ওই তিন তরুণী ও রুমনকে এ মুহূর্তে শ্যামনগর থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, অন্যের অস্ত্র ব্যবহার, বেপরোয়া গাড়ি চালানো, অসামাজিক কাজে জড়িত থাকা এবং গাড়িতে জাতীয় সংসদ সদস্যের স্টিকার ব্যবহার করার দায়ে অন্তত ছয়টি ধারায় রুমনের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ মামলার বাদী হবেন শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) লিটন মিয়া।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল রাতে শ্যামনগরের ওই রিসোর্টের একটি কক্ষে ওঠেন রুমন। এ সময় তাঁর সঙ্গে তিন তরুণী ছিল। একপর্যায়ে পুলিশে খবর গেলে রুমন ও তিন তরুণীকে অস্ত্রসহ শ্যামনগর থানায় নিয়ে আসা হয়। এ সময় তাঁর কাছে ৪৩টি গুলি পাওয়া যায়। একই সময়ে জাতীয় সংসদের স্টিকার লাগানো তাঁর মা সংসদ সদস্য রিফাত আমিনের জিপটিও পুলিশ হেফাজতে নেয়।
খবর পেয়ে সংসদ সদস্য রিফাত আমিন শ্যামনগর থানায় ছুটে যান। তিনি তাঁর ছেলেকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হন। রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, রুমন কেবলই ফাই-ফরমাশ করছিলেন।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক বলেন, ‘রুমনকে অস্বাভাবিক অবস্থায় রিসোর্ট কক্ষ থেকে তিন নারী, পিস্তল, গুলি, গাড়িসহ রাতেই থানায় নিয়ে আসা হয়। এ সময় তিনি পুলিশের ওপর বারবার চড়াও হন।’
ওসি আরো বলেন, লাইসেন্স করা অস্ত্রের বেআইনি ব্যবহার, অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকা, মাদক গ্রহণ, বেপরোয়া গাড়ি চালনা এবং অনুমোদন ছাড়া জাতীয় সংসদের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ব্যবহারসহ কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলার কাগজপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সাফায়াত সরোয়ার রুমন দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। সেখানে একটি অনৈতিক কাজের দায়ে তাঁকে সৌদি সরকার দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করে। ঢাকার শাহবাগে মাদকসহ রুমন একবার আটক হয়েছিলেন। কিছুদিন আগে শহরের বিউটি হোটেলে নারীসহ হাতেনাতে আটক হন রুমন। এ ছাড়া সম্প্রতি তিনি ইকবাল হোসেন নামের একজন শিক্ষককে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন।
পুলিশ আরো জানায়, সাতক্ষীরা শহরজুড়ে রুমন ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিতে মোটরসাইকেল চালান। প্রাইভেটকারও চালান বেপরোয়াভাবে।