বোরোর ফলন ভালো হলেও শঙ্কায় ভৈরবের চাষিরা
চলতি মৌসুমে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বোরো ধানের ভালো ফলন হলেও ধানের বাজারদর কম থাকায় মন ভালো নেই এখানকার চাষিদের।
বাজারে প্রচুর ধানের আমদানি হলেও ক্রেতার অভাবে বেঁচাকেনা একদম না থাকার দাবি ব্যবসায়ীদের। তাই সরকারিভাবে দ্রুত ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করার দাবিও তাঁদের।
অপরদিকে অব্যাহত লোকসান ঠেকাতে ধানের উৎপাদন খরচ কমাতে রিপার পদ্ধতিতে ধান কর্তন করে খরচ কমানো এবং ধানের পরিবর্তে লাভজনক ফসল বাদাম ও সরিষা আবাদের পরামর্শ স্থানীয় কৃষি বিভাগের।
মাঠের পর মাঠ সোনালি পাকা ধানে ভরপুর। বৈশাখী দমকা বাতাসে পাকা ধানের শিষ দুলছে। ভৈরবের বোরো আবাদ এলাকার যেদিকে চোখ যাবে, এমন মনোমুগ্ধ আর নয়নাভিরাম দৃশ্যই চোখে পড়বে। কিন্তু যারা গায়ের ঘাম ঝরিয়ে সোনালি ধানের ফলন ফলিয়েছেন, তাদের চোখে ক্রমাগত লোকসানের আতঙ্ক আর হতাশা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক মণ ধান ফলনে তাদের খরচ পড়ে যায় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। আর ধানের বর্তমান বাজারদর মাত্র ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।
বর্তমানে ভৈরবসহ আশপাশের জেলা-উপজেলার হাওরাঞ্চলের বোরো ধান কাটার মৌসুম প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রতিদিন নদী ও সড়কপথে বিপুল পরিমাণ ধান ভৈরবের আড়তগুলোতে আসছে। ক্রেতার অভাবে ধান বিক্রি হচ্ছে না বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করার দাবি জানিয়েছেন।
একই অবস্থার বর্ণনা দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় সরকারি পর্যায়ে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করার দাবি জানালেন ভৈরব খাদ্যশষ্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. হুমায়ুন কবীর।
ভৈরব উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে ভৈরবে ছয় হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ছয় হাজার ১৫৩ হেক্টরে। আর বড় রকমের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় ফলনও হয়েছে বেশ ভালো।
ভৈরব উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন প্রধান জানান, ধান কাটার আধুনিক ব্যবস্থা রিপার মেশিন দিয়ে ধান কাটলে প্রতি বিঘায় কৃষকের খরচ পড়বে মাত্র ৩৫০ টাকা। যেখানে শ্রমিক দিয়ে কাটলে প্রতি বিঘার খরচ হয় দুই হাজার টাকারও বেশি। তাই তিনি ধানের উৎপাদন খরচ কমাতে এই রিপার পদ্ধতিতে ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি ধান চাষে যেহেতু উৎপাদন খরচ বেশি হয় বলে কৃষকদের লোকসান গুনতে হয়, সেহেতু ধানের পরিবর্তে বাদাম ও সরিষার মতো লাভজনক ফসল চাষেরও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।