মানিকগঞ্জে কেন্দ্র দখল, ৪ প্রার্থীর নির্বাচন বর্জন
বিএনপি ও দলটির বিদ্রোহী চার প্রার্থীর নির্বাচন বর্জন ও সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে মানিকগঞ্জের সিংগাইর ও সাটুরিয়া উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।
এর আগে আজ শনিবার সকাল ৮টায় একযোগে ১৯১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তা চলে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত। যদিও সব ভোটকেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রশাসন। তারপরও সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। প্রার্থী ও ভোটারদের পদচারণে ভোটকেন্দ্র এলাকায় সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।
নির্বাচন বর্জনকারী চার চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন সিংগাইরের ধল্লা ইউপিতে বিএনপির মো. আবদুল আলী, বায়রা ইউপিতে বিএনপির মো. সেলিম ও বিএনপির বিদ্রোহী দেওয়ান হোসেন (মোটরসাইকেল) এবং চান্দহর ইউপিতে বিএনপির মো. আমজাদ হোসেন।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার সিংগাইরের ১১টি ও সাটুরিয়ার নয়টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইউনিয়নগুলোতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি মনোনীত ও স্বতন্ত্র ৮৭ চেয়ারম্যন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সাধারণ সদস্য পদে ৫৭৮ ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে প্রার্থী ১৮৮ জন। ২০টি ইউনিয়নে ভোটার তিন লাখ ২৭ হাজার ২৭৭ জন। তাঁদের অধিকাংশই স্থায়ী ও অস্থায়ী ১৯১টি কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। প্রার্থীদের প্রভাব বিস্তার ও নিরাপত্তাজনিতসহ নানা কারণে ১৭৭টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রশাসন। এ কারণে অন্যান্য কেন্দ্রের চেয়ে এসব কেন্দ্রে নেওয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা।
নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আবদুল আলী সাংবাদিকদের জানান, ভোটগ্রহণ শুরুর পরপরই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. জাহিদুল ইসলাম (নৌকা) ও তাঁর লোকজন নয়টি ওয়ার্ডের সব কেন্দ্রে ভোট কারচুপি এবং কেন্দ্র দখল করে নেন। এ সময় সব কেন্দ্র থেকেই ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের মারধর বের করে দেন তাঁরা। বিষয়টি প্রশাসন ও রিটার্নি কর্মকর্তাদের জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ কারণে তিনি এই নির্বাচন বর্জন করেছেন। আর ভোট বর্জনের ঘোষণার পরপরই তাঁর বাড়িতে প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা করেছেন। এতে বাড়ির নারীসহ অন্তত পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
নির্বাচন বর্জনকারী প্রার্থী মো. সেলিম ও দেওয়ান হোসেন অভিযোগ করেন, ভোটগ্রহণ শুরুর পরপরই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী দেওয়ান জিন্নাহ (নৌকা) ও তাঁর লোকজন সব ভোটকেন্দ্র দখল করে নেন। এ সময় সব কেন্দ্র থেকেই ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেন তাঁরা। এ কারণে দুপুর আড়াইটার দিকে পৃথকভাবে তাঁরা নির্বাচন বর্জন করেন।
মো. আমজাদ হোসেন একই অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী শওকত আলী (নৌকা) ও তাঁর লোকজন জাল ভোট, কারচুপি এবং কেন্দ্র দখল করেন। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে বেলা ৩টার দিকে নির্বাচন বর্জন করেন তিনি।
এদিকে, দুপুর ২টার দিকে সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চরতিল্লী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইউপি সদস্য প্রার্থী শওকত আলী (মোরগ) ও ইমরান হোসেন (ফুটবল) সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কোথাও কোনো বড় ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। ছোটখাটো দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার খবর শোনা গেছে। তবে এসব ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার সদস্যের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট গণনার কাজ চলছে। আর ভ্রাম্যমাণ আদালত, বিজিবি ও র্যাব টহল এবং পুলিশের স্টাইকিং ফোর্স কাজ করছে।
দ্বিতীয় দফার তফসিলে গত ৩১ মার্চ মানিকগঞ্জের হরিরামপুর ও দৌলতপুর উপজেলার ২০টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তৃতীয় দফায় মানিকগঞ্জের শিবালয় ও ঘিওর উপজেলার ১৪টি ইউপিতে নির্বাচন হয়েছে। আর চতুর্থ দফায় মানিকগঞ্জের সিংগাইর ও সাটুরিয়া উপজেলার ২০টি ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হলো।