মেয়র মান্নান রিমান্ডে
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত হওয়া মেয়র এম এ মান্নানকে নাশকতার দুই মামলায় তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ বুধবার দুপুরে গাজীপুরের পৃথক দুটি আদালত জয়দেবপুর থানার একটি মামলায় একদিন এবং কালিয়াকৈর থানার নাশকতার অপর মামলায় এম এ মান্নানকে আরো দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
কালিয়াকৈর থানার মামলায় রিমান্ড মঞ্জুর করেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. শহিদুল ইসলাম এবং জয়দেবপুর থানার মামলায় বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. আব্দুল হাই।
আদালত পরিদর্শক রবিউল ইসলাম জানান, গত ১৫ এপ্রিল রাতে জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর ও টঙ্গী থানা এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগের (নাশকতার) ঘটনার দুটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় এম এ মান্নানকে। এসব মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে মান্নানকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আলাদাভাবে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এরপর গাজীপুরের কালিয়াকৈরের আনসার একাডেমির সামনে একই দিন (১৫এপ্রিল) সন্ধ্যায় পুলিশবহনকারী একটি গাড়িতে পেট্রোলবোমা ও ককটেল নিক্ষেপ করে অগ্নিগংযোগ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় দায়ের করা অপর একটি মামলায় সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে এম এ মান্নান ও তার ছোট ভাই আব্দুল কাদেরকে গাজীপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালত-২ এ হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাঁদের প্রত্যেকের দুই দিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন ওই আদালতের বিচারক শহীদুল ইসলাম।
আসামী পক্ষের আইনজীবী ড. মো. শহীদুজ্জামান, সুলতান উদ্দিন, মঞ্জুর মোরশেদ প্রিন্স ও মেহেদী হাসান এলিস জানান, অসুস্থ মান্নানকে বুধবার সকালে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আদালত প্রাঙ্গণে আনা হয়। পরে দুপুরে তাঁকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়।
শুনানি শেষে আদালত থেকে বের হওয়ার সময় এম এ মান্নান দুই হাত ওপরে তুলে ফরিয়াদ করেন এবং গাজীপুরবাসীর দোয়া চান।
গত ১৫ এপ্রিল রাতে অধ্যাপক এম এ মান্নানকে কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকা থেকে নাশকতার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করে পুলিশ। ওই রাতে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায়, কালিয়াকৈরের আনসার একাডেমির সামনে এবং টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি আলিফ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ পৃথক নাশকতার ঘটনা ঘটে। ওই তিনটি ঘটনায় অধ্যাপক এম এ মান্নানকে প্রধান আসামি করে জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর ও টঙ্গী থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়।
এর আগে গত ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে যাত্রীবাহীবাসে পেট্রলবোমা হামলার মামলায় ওই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএসের নিজ বাসা থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (জিসিসি) মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জয়দেবপুর থানার একটি ফৌজদারি মামলায় মান্নানের বিরুদ্ধে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র ২০১৫ সালের ১২ মে গাজীপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে গৃহীত হওয়ায় ওই বছরের ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ তাঁকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
অধ্যাপক এম এ মান্নান ২২টি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভের পর গত ২ মার্চ জামিনে কারামুক্ত হন। কারা মুক্তির পর গত ৩১ মার্চ মেয়র পদ থেকে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কারাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন এম এ মান্নান। মেয়র মান্নানকে দেওয়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ওই সাময়িক বরখাস্তের আদেশ গত ১১ এপ্রিল ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে হাইকোর্ট। পরে ১৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল করলে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বহাল রাখেন। এরপর গত ১৯ এপ্রিল ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯’ এর ধারা ১২ এর উপধারা (১) এর ক্ষমতা বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানকে আবারও সাময়িক বরখাস্ত করে।
অধ্যাপক এম এ মান্নানের অবর্তমানে গত বছরের ৮ মার্চ থেকে প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মেয়র মান্নানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ২৫টি মামলা হয়েছে।