তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে রায়ের পুনঃশুনানি দাবি
অবসরে গিয়ে বিচারপতিদের লেখা রায়ের পুনশুনানি হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সংক্রান্ত রায়েরও পুনঃশুনানি হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।
আজ সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের নিজ কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব এ মন্তব্য করেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি বলেছেন, অবসরে যাওয়ার পর সাবেক দুই বিচারপতির লেখা ১৬৮টি মামলার যদি পুনরায় শুনানি হয়, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে মামলারও পুনঃশুনানি করা উচিত।
খন্দকার মাহবুব বলেন, সাবেক দুই বিচারপতির লেখা ১৬৮টি মামলা এরই মধ্যে পুনঃশুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ৫ মে এসব মামলা শুনানি শুরু হবে। এটি যদি আদালতের সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মামলাটি সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার প্রায় ১৬ মাস পর রায় লিখে স্বাক্ষর করেন। এতে করে এ মামলাটিও পুনঃশুনানির দাবি রাখে। তিনি বলেন, ‘তাই প্রধান বিচারপতির কাছে আমাদের দাবি, এ মামলাটিও পুনঃশুনানির জন্য কার্যতালিকায় আনা হোক।’
২০১১ সালের মে মাসে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন। ওই রায়ের ভিত্তিতে পঞ্চদশ সংশোধনী করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার পর ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয় পূর্ণাঙ্গ রায়।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের কাছে রায় লেখার অপেক্ষায় থাকা ১৬১টি এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের কাছে থাকা সাতটি মামলার পুনঃশুনানির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ১৬১ মামলার মধ্যে বেশির ভাগ মামলার রায় লেখার কাজ শেষ করেছিলেন বিচারপতি মানিক। কিন্তু তাঁর লেখা রায় গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় গত ২৬ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি মামলাগুলো পুনঃশুনানির নির্দেশ দেন। এর পরপরই প্রস্তুত করা হয় এসব মামলার পেপারবুক।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আগামী ৩ মের আপিলের কার্যতালিকায় মামলাগুলো পুনঃশুনানির জন্য এসেছে।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চের কার্যতালিকায় ১৬৯ থেকে ২৭৪ ক্রমিকে বিচারপতি মানিকের কাছে রায় লেখার অপেক্ষায় থাকা মামলাগুলো পুনঃশুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। আর বাকি মামলাগুলো আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিয়ার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে পুনঃশুনানির জন্য এসেছে।
বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন বাংলাদেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যান। শামসুদ্দিন চৌধুরী অবসরে যান গত অক্টোবরে।
প্রধান বিচারপতির একান্ত সচিব মো. আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ২৬ এপ্রিল এসব মামলার পুনঃশুনানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
২০১৫ সালের ১ অক্টোবর আপিল বিভাগ থেকে অবসরে যান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। অবসরে যাওয়ার সময় ১৬১টি মামলার রায় লেখার দায়িত্ব ছিল তাঁর। এসব মামলা তার অবসরে যাওয়ার আগেই আপিল বিভাগ বিভিন্ন সময়ে শুনানি গ্রহণ সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত আদেশও জানিয়ে দেন। শুধু পূর্ণাঙ্গ রায় লেখার কাজ বাকি ছিল। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গত ১৭ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বাণীতে অবসরের পরে রায় লেখাকে সংবিধানপরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করেন।