‘তোমরাও কি এভাবে খিচুড়ি খাবে’
সাতক্ষীরার কলারোয়ার আট বছরের এক শিশুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার দেয়াড়া গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত সোমা খাতুন কলারোয়ার দেয়াড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদ্য নির্বাচিত সদস্য মো. শহিদুল ইসলামের মেয়ে। সে দেয়াড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। পুলিশের অনুমতিতে আজ শনিবার সকালে পারিবারিক গোরস্থানে শিশুটিকে দাফন করা হয়।
তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট সোমা। শহিদুল ইসলামের বড় ছেলে শাহজালাল এসএসসি পাস করে মালয়েশিয়ায় চলে গেছে। মেয়ে স্বর্ণালীকে বিয়ে দিয়েছেন রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায়। বাড়িতে শুধু মেয়ে সোমাকে নিয়ে বেশ কাটছিল শহিদুল ও তাঁর স্ত্রী নূরী বেগমের।
শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার ছিল। তাই স্কুলে যাওয়া আর লেখাপড়ার তাড়া না থাকায় সারা দিন মেয়েটি বাড়িতেই কাটিয়েছিল। কাঁচা-পাকা আম খেয়ে খেলাধুলা করে বেশ হেসেখেলেই কাটিয়েছিল সে। দুপুরে এক সঙ্গে খাসির মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছি। আমার সেই একটুখানি মেয়ে কেন যে আমাদের ছেড়ে চলে গেল বুঝতেই পারছি না।’
শহিদুল বলেন, ‘ওই দিন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে আমি বাজারের দিকে গেছি। নূরীও বাড়ির পাশে মহিলা শ্রমিকদের মাঠের কাজ দেখছিল বসে বসে। এ সময় সবার অজান্তে সোমা পড়ার টেবিলে উঠে ঘরের আড়ার সঙ্গে নিজের ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে ছুটে আসে সবাই। তড়িঘড়ি করে নামাতেই পাওয়া যায় নিথর দেহ তার।’
শহিদুল জানান, তাঁর ভাইয়ের ছেলের বৌ নাজমা খাতুন সোমার স্কুলের শিক্ষক। তিনি বাবার বাড়ি গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার সময় খিচুড়ি নিয়ে আসেন। তিনি এসে জানান, তাঁর গ্রামে ১১ বছরের একটি ছেলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এটি তার চেহলামেরই খিচুড়ি। তাঁর মেয়ে ও প্রতিবেশী শিশু রিয়াদ একসঙ্গে খিচুড়ি খায়। এ সময় সোমা বলে, ‘আমি যদি আত্মহত্যা করি তাহলে তোমরাও কি আমার খানার খিচুড়ি এভাবে খাবে।’
‘সোমা মুখে যা বলেছে, তাই করেছে।’ বলেই কেঁদে ফেলেন বাবা শহিদুল।
খোরদো পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) লুৎফর রহমান জানান, খবর পেয়ে গতকাল রাতেই তিনি ঘটনাস্থলে যান। ময়নাতদন্ত না করার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়। এই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি মেয়েটিকে দাফন করার অনুমতি দেন।