ভৈরবে কোটি টাকার বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের সবচেয়ে বড় হাওর জোয়ানশাহীতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে হাওর এলাকার কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক থাকার কথা; কিন্তু বাস্তবতা উল্টো।
সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা আর কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের ফসল তলিয়ে উজানের পানি ধেয়ে আসছে ভাটি অঞ্চল ভৈরবের দিকে। আর সেখানকার একমাত্র বড় হাওরটি মেঘনার কোলঘেঁষা হওয়ায় বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন কৃষক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভৈরব উপজেলার আগানগর, শ্রীনগর আর সাদেকপুর ইউনিয়নের চার হাজার হেক্টর আয়তনের জোয়ানশাহী হাওর। এর প্রায় পুরোটাতে আবাদ হয় বোরো ধানের। এবারো ওই হাওরের তিন হাজারের বেশি ধানি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। কৃষকদের ঘামঝরা শ্রমে ধানের ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। এখন হাওরজুড়ে আধা-পাকা ধানের সমারোহ। মৃদু বাতাসে দুলছে ধানের শীষ। আর কিছুদিন পর থেকেই সে ধান কাটা শুরু হওয়ার কথা। ভালো ফলনের ধানে কৃষকের গোলা ভরে ওঠার কথা। কিন্তু সে স্বপ্নে বাদ সেধেছে প্রমত্তা মেঘনাসংযুক্ত জোয়ানশাহী হাওরের ওরারখাল। উজান থেকে নেমে আসা পানি ওই খাল দিয়ে হাওরে ঢুকে ধান তলিয়ে নেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই কৃষকদের প্রতিটি দিন কাটছে চরম উৎকণ্ঠায়।
নদীতে জোয়ার দেখলেই দলবেঁধে কৃষক ছুটে যাচ্ছেন খালের কাছে। বালির বস্তা আর মাটি ফেলে খালের মধ্যে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন।
এমন প্রচেষ্টা প্রতিবছরই চালান বলে জানান শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. ওসমান গনি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. বাহারুল হকসহ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। তাঁরা জানান, জোয়ারের পানি খালে ঢুকলে প্রথম তোড়েই সেই প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়।
ওই কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, জোয়ার ও উজানের পানি ঢুকে প্রায় প্রতিবছরই তাঁদের বোরো ধানের জমি তলিয়ে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এর সমাধানে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে একটি স্লুইসগেট নির্মাণের দাবি করে আসছেন। কিন্তু তাঁদের সে দাবি আজো বাস্তব হয়নি।
ওরারখাল দিয়ে জোয়ানশাহী হাওরে পানি ঢুকে কৃষকের অপূরণীয় ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন প্রধানও দ্রুত একটি স্লুইসগেট নির্মাণের দাবি জানান। এই স্লুইসগেট নির্মাণ হলে এই হাওরে বোরোর আবাদ আরো বৃদ্ধিসহ কৃষক অনেক লাভবান হবেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে পানি আটকিয়ে এই হাওরে বিপুল পরিমাণ মাছ উৎপাদনও সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়ে অস্থায়ীভাবে মাটির বাঁধ তৈরি করতে অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিলরুবা আহমেদ। তিনি জানান, ওরারখাল সমস্যার স্থায়ী সমাধানে একটি স্লুইসগেট নির্মাণে এরই মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় প্রকৌশলীদের সঙ্গে তিনি পরামর্শ করেছেন। সবার সহায়তায় একটি স্লুইসগেট নির্মাণে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলেও জানান তিনি।