আমার স্বামীকে দিয়ে যাও, অধ্যাপকের স্ত্রীর আর্তনাদ
‘কোন মানুষ... আল্লাহ সেই মানুষটাকে দেখলে আমি খালি বলতাম, আমার স্বামীকে তোমরা তুলে নিয়েছ, আমার স্বামীকে তোমরা ফিরিয়ে দাও। আমি কিচ্ছু বলব না ওদেরকে। আমি বলব আমার স্বামীকে দিয়ে যাও। আমার স্বামীকে দিয়ে যাও।’
এই আর্তনাদ-আকুতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীর স্ত্রী হোসনে আরা শিরার।
অধ্যাপক রেজাউল করিম প্রতিদিন বাসা থেকে বের হয়ে শালবাগান মোড়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে উঠতেন। অন্যান্য দিনের মতো আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নাস্তা করে বিশ্ববিদালয়ে যাওয়ার উদ্দেশে তিনি বাসা থেকে বের হন। বাসা থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে শালবাগান মোড়ের গলির মধ্যে দুর্বৃত্তরা তাঁকে পেছন থেকে কুপিয়ে হত্যা করে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। যে বাসার সামনে তাঁকে হত্যা করা হয়, তারা পুলিশকে খবর দেয়। এর পর পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। হত্যাকাণ্ডের ধরন দেখে পুলিশ দাবি করেছে, ব্লগার হত্যার সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের মিল রয়েছে।
নিহত রেজাউল করিম সিদ্দিকীর স্ত্রী হোসনে আরা শিরা বলেন, ‘একটি ভালো মানুষ দোকান থেকে নাস্তা করে বাস ধরবে বলে যাচ্ছে। (বিশ্ববিদ্যালয়ে) তাঁর ক্লাস আছে। যদি বাসে উঠে যেত তাহলে বোধ হয় বেঁচে যেত। আহা! বাসে উঠতে পারল না তার আগেই শেষ। আমাকে খবর দেওয়া হলে আমি চিৎকার করতে করতে গেছি এই তোমরা কে আছ, বের হও। তাঁকে মেডিকেলে নিয়ে যেতে হবে। ওরা বলেছে, মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। অলরেডি ডেড। ওর মতো ভালো মানুষ... আশ্চর্য কথা! আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি! এই সংবাদে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি! এত বড় দায়িত্ব আমাকে দিল। ছেলেমেয়ে কেউ মানুষ হলো না। একটাকেও বিয়ে দিতে পারলাম না। কেউ (সন্তানরা) মানুষ হলো না। তাদের লেখাপড়া শেষ হলো না।’
নিহত অধ্যাপক রেজাউল করিমের দুই সন্তান। ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। মেয়ে রেজোয়ানা হাসিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী।
পরিবারের ভাষ্য, অধ্যাপক রেজাউল করিম কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। কারো সাথে তাঁর ব্যক্তিগত শত্রুতাও ছিল না।