প্রতারণার সিটি নির্বাচন করছে সরকার : ২০ দল
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট বলেছে, ‘আন্দোলনের গতিধারা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য চক্রান্তের অংশ হিসেবেই সরকার ঢাকা ও চট্টগ্রামে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজন করছে। নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশের কোনো লক্ষণই নেই।’
আজ বুধবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লা বুলু স্বাক্ষরিত জোটের বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। এতে আরো বলা হয়, ‘গত ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো প্রতারণামূলক স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনও সরকার।’
২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেওয়া এ বিবৃতিতে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করার পাশাপাশি দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ এবং আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নাগরিকের বাক-ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণকারী এবং উৎপীড়ক ও লুটেরা আওয়ামী স্বৈরশাসনের কবল থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে দেশবাসীকে সাথে নিয়ে ২০-দলীয় জোট যখন আন্দোলন সংগ্রামে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত, ঠিক তখনই মহাচক্রান্তের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকার আন্দোলন সংগ্রামের গতিধারাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে রাজধানীর বিভক্ত দুই সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ডিঙিয়ে যে দেশে কোনো সংস্থা নির্বাচন কমিশনকে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ করে দিতে পারে, সে দেশের নির্বাচন কমিশন কতটুকু স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও ক্ষমতাবান হতে পারে তা বুঝতে মহাজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে বিএনপিসহ অন্যান্য দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হলেও নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিময় পরিবেশ নিশ্চিতের কোনো লক্ষণ এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়।’
সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘সকল দল, নগরবাসী তথা দেশবাসীর কাছে সিটি করপোরেশন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার মতো ইচ্ছা নির্বাচন কমিশনের থাকলে তড়িঘড়ি করে পুলিশ মহাপরিদর্শকের পরামর্শে এপ্রিল মাসেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের তফশিল ঘোষণা করা হতো না। নির্বাচন কমিশন ঠুটো জগন্নাথ বলেই আজ কোনো প্রার্থীই নির্বাচনী আচরণবিধির তোয়াক্কা করছে না। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পূর্বে কোনো নাগরিক সমাজ, বুদ্ধিজীবী বা সুশীলসমাজের সাথে পরামর্শ করা হয়নি। সরকারের নীল নক্শা অনুযায়ী তফসিল ঘোষণা করে ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় আরেকটি প্রতারণামূলক নির্বাচনী নাটক মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন তথা সরকার। আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন দিয়ে যে তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে তা গোটা দেশবাসীর ইচ্ছার সাথে তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘বিএনপির অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে অপহরণের ১৫ দিন অতিবাহিত হয়েছে অথচ এখনো পর্যন্ত তার সন্ধান দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। অবশ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ গতকাল বলেছেন, খুব শিগগির সালাহ উদ্দিন আহমেদ অপহরণ রহস্য উন্মোচিত হবে। ২০-দলীয় জোট মনে করে, হানিফ সাহেবের বক্তব্যে বোঝা যায় যে সালাহ উদ্দিন আহমেদ সরকারের গোচরেই আছেন। দেশবাসী সুস্থ অবস্থায় সালাহ উদ্দিন আহমেদকে জনসমক্ষে হাজির করার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। যে মাসে দেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল সেই মাসে বিএনপিসহ বিরোধী সকল দলের গুমকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিয়ে হতাশাগ্রস্ত ও উৎকণ্ঠিত পরিবারবর্গকে সরকার আশার আলো দেখাবে এটাই সবার প্রত্যাশা।’
২০-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সারা দেশে বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, নাগরিক ও সাংবাদিক সমাজের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গসহ অগনিত বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে বন্দী রাখা হয়েছে। তাঁদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে অথচ আইনি বিধি-বিধান পরোয়ায় না এনে তাঁদের জামিনও দেওয়া হচ্ছে না। জামিন পাওয়া একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার, কিন্তু সেই অধিকারটুকুও আজ ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। তবে ২০-দলীয় জোট আশা করে-সরকার অবিলম্বে বিএনপি ও বিরোধী দলগুলোর শীর্ষ নেতৃবন্দসহ সকল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপ্রসূত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করবে এবং কারান্তরীণ নেতা-কর্মীদের মুক্তি দেবে।’