সিলেটে ঝুঁকিপূর্ণ ৩২ ভবন ভাঙার নোটিশ
ভূমিকষ্পে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ৩২টি ভবন ‘অতি দ্রুত’ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে একটির মালিককে আগামী বুধবারের মধ্যে ভবন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনের মধ্যে সিটি করপোরেশনের একটি সুপার মার্কেটও রয়েছে, যেটি এক সপ্তাহের মধ্যে খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের।
আজ সোমবার সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞ টিমের মাধ্যমে নগরীর ৩২টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে ফেলার জন্য মালিকপক্ষকে নোটিশও দেওয়া হয়েছে।’
‘আগামী বুধবারের মধ্যে নগরীর তাঁতিপাড়ার একটি ভবন মালিকপক্ষ না ভাঙলে বৃহস্পতিবার সিটি করপোরেশন নিজেই সেই ভবনটি ভেঙে ফেলবে।’
প্রকৌশলী নূর আরো বলেন, এ ছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সিটি সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদেরও এক সপ্তাহের মধ্যে মার্কেট খালি করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
কাছাকাছি কয়েকটি ভূগর্ভস্থ বিচ্যুতি বা ফল্ট লাইন থাকায় প্রচণ্ড ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট। সাম্প্রতিক ঘনঘন কয়েকটি ভূমিকম্পের কারণে বেড়েছে নগরবাসীর আতঙ্কও। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানে নামে সিলেট সিটি করপোরেশন। তার অংশ হিসেবেই এসব ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট অনেকেই জানিয়েছেন, কেবল ৩২টি নয়, নগরীতে আরো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের তালিকা করে নোটিশ দেওয়া হবে। এদের মধ্যে শপিং মল, অ্যাপার্টমেন্ট, হোটেলও রয়েছে। যদিও এসব বহুতল ভবনের বেশিরভাগেরই নির্মাণ অনুমোদন নেই।
সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন এবং ফায়ায় সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কাছ থেকে নকশা অনুমোদন না করিয়ে এবং মাটির পরীক্ষা ছাড়াই অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে এসব বহুতল ভবন। এ ছাড়া প্রায় শতাধিক ভবন রয়েছে যেগুলো নির্মাণ করা হয়েছে দীর্ঘদিন আগে। এসব ভবন এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে ফাটল ধরা এসব ভবনে ঝুঁকি নিয়েই চলছে বসবাস। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবনের ব্যাপারে এত দিন অনেকটাই উদাসীন ছিল সিলেট সিটি করপোরেশন।
শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ টিম দিয়ে সম্প্রতি সিটি করপোরেশন নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের একটি তালিকা তৈরি করে। এ তালিকায় ৩২টি ভবনকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শহিদুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে নকশা অনুমোদনের আগে ভবন মালিককে ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র নিতে হয়। কিন্তু তা অনুসরণ করা হয়নি। সিলেট ফায়ার সার্ভিসের কাছে নগরীর প্রায় ২০০ বহুতল ভবনের তালিকা রয়েছে।
‘এসব ভবনের প্রায় অর্ধেকই নির্মাণ হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক অনুমোদন না নিয়েই’, যোগ করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও পুরো প্রকৌশল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, রিকটার স্কেলে পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প হলে সিলেটের ৮০ ভাগ ভবনই ধসে পড়বে। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এ অঞ্চলের প্রায় ৯৫ ভাগ স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রাণ হারাবে ১২ লাখ মানুষ এবং ক্ষতি হবে ১৭ হাজার কোটি টাকার সম্পদ।