চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে পুণ্যার্থীদের ঢল
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদে আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র অষ্টমী স্নান শুরু হয়। পাপ মোচনের আশায় লাখো পুণ্যার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে চিলমারীর ব্রহ্মপুত্রের পারের প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকা।
হে মহা ভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য, তুমি আমার পাপ হরণ করো এ মন্ত্র উচ্চারণ করে পুণ্যার্থীরা কৃপা চান ব্রহ্মার। স্নান উৎসবে মেতে উঠেন পুণ্যার্থীরা।
গতকাল বুধবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে হাজার হাজার পুণ্যার্থী ভিড় জমান চিলমারী উপজেলার চিলমারী বন্দর ব্রহ্মপুত্রের পারে। সড়ক পথে, বাস, মাইক্রোবাস, গাড়িতে, নসিমনে, অটোরিকশায় চিলমারী বন্দর এলাকায় আসেন পুর্ণ্যার্থীরা। নদী পথে ট্রলার ও নৌকাযোগেও বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে পুণ্যার্থীরা সমবেত হন।
চিলমারী বন্দর ব্রহ্মপুত্রের পারে উৎসব কমিটির নেতারা বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারো ভারত, নেপাল ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুলসংখ্যক পুণ্যার্থী যোগ দিয়েছেন স্নান উৎসবে। তাঁরা আরো জানান, তবে স্নান উৎসব যদি বুধবার হতো তাহলে ভারত ও নেপাল থেকে বেশি সংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বী আসতেন।
স্নানের লগ্ন বৃহস্পতিবার ৭টা ৩০মিনিট থেকে শুরু হলেও চিলমারী ব্রহ্মপুত্রের পারে অষ্টমীর স্নান শুরু হয় ভোর ৫টা থেকে এবং শেষ হয়েছে সকাল ৯টা ৩০মনিটে। কোনো নির্দিষ্ট ঘাট না থাকায় উমুক্ত স্নানঘাটের মাধ্যমে পুণ্যার্থীরা স্নানপর্ব সম্পন্ন করেছেন।
স্নান উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গোসলের পর নদীর কিনারায় ঘাটের পাশেই নারীদের কাপড় বদলানোর জন্য বুথের ব্যবস্থা করা হয়। ৪০টি টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। ৪৫টি ধর্মীয় সামাজিক ও সেবা মূলক ক্যাম্প খোলা হয়েছে। এসব ক্যাম্প থেকে পুণ্যার্থীদের রান্না করা খাবার ও চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণকক্ষ। নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ভিডিপির পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করাসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশি পাহারার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
আজ বিকেলে জোড়গাছ বাজার ও আগামী কাল শুক্রবার বালাবাড়ীহাটে মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
স্নান উৎসব উপলক্ষে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন, চিলমারী উপজেলা চেয়াম্যান মো. শওকত আলী সরকার বীর বিক্রম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্নান উৎসব কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।
স্নান উৎসব কমিটির আহ্বায়ক দিনেশ চন্দ্র দাশ জানান, দেশ-বিদেশের প্রায় তিন থেকে চার লাখ পুণ্যার্থী স্নান উৎসবে যোগ দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, এবার গতবারের চেয়েও বেশি সংখ্যক পুণ্যার্থী যোগ দিয়েছেন।
জেলা পুলিশ সুপার তবারক উল্ল্যা বলেন, ‘স্নান উৎসবকে ঘিরে যাতে করে পুর্ণার্থীদের কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয় ও আইনশৃঙ্খলার কোনো অবনতি না হয় সেজন্য কঠোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’