মধু আহরণে গহিন সুন্দরবনের পথে মৌয়ালরা
মনে পীর-পয়গম্বরদের সাহস, বুকে মা বনবিবির লাল রঙের রুমাল আর ললাটে বনমায়ের ধূলি মেখে শ্বাপদ-সংকুল সুন্দরবনের নদীতে বিশাল আকারের নাও ভাসালেন মৌয়ালরা।
মধু আহরণের লক্ষ্যে আজ শুক্রবার সকালে এভাবেই শক্তিতে সজ্জিত হয়ে পশ্চিম সুন্দরবনের অধীন সাতক্ষীরা রেঞ্জের শ্যামনগরের কয়েকশ মৌয়াল বনে প্রবেশ করেছেন। এর আগে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় মধু আহরণের পাস।
এ উপলক্ষে শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনীতে আয়োজন করা হয় এক বিদায় অনুষ্ঠানের। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বন সংরক্ষক জহিরউদ্দিন আহমেদ। এ সময় ডিএফও (খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা) মো. সাইয়েদ আলম, সাতক্ষীরা রেঞ্জের এসিএফ (সহকারী বন সংরক্ষক) শোয়েব আলী, কোবাডাক, কদমতলা, বুড়িগোয়ালিনী ও কৈখালী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান, মো. গোলাম মোস্তফা, শ্যামাপ্রসাদ, নজরুল ইসলাম ও মো. কামরুল ইসলামসহ বন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে সুন্দরবনের কলাগাছিয়া ফরেস্ট স্টেশনে একটি মৌচাক কেটে মধু সংগ্রহের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয় মধু মৌসুমের।
সাতক্ষীরার এসিএফ মো. শোয়েব আল বলেন, ‘চলতি মৌসুমে পশ্চিম সুন্দরবন থেকে দেড় হাজার কুইন্টাল মধু ও ৩৭৫ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। এ জন্য শতাধিক মৌয়ালের হাতে পাস তুলে দেওয়া হয়েছে।’
এর আগে মৌয়ালদের পরিবারের সদস্যরা তাঁদের বিদায় জানায়। বনে যাতে তাঁদের কোনো বিপদের সম্মুখীন বা জীবনহানি না হয়, সেই কামনায় মৌয়ালদের স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা মধু মৌসুমের তিন মাস স্থানীয়ভাবে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী মাথায় তেল-চিরুনি ছোঁয়াবেন না এবং নগ্ন পায়ে কাটাবেন। মধু সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে লোকালয় ছাড়া মৌয়ালরা বনের নদীতে নৌকায় ভাসমান অবস্থায় তিন মাসের জন্য আস্তানা গাড়বেন। তাঁরা লড়াই করবেন বাঘ, কুমির, সাপসহ নানা ধরনের বিপদের সঙ্গে। লড়বেন বনদস্যুদের সঙ্গেও।
মৌয়ালরা বনের মাটিতে পা দিয়েই সুর করে উচ্চারণ করেন ‘মাগো মা দেখিয়ে দে মা পুণ্য মধুর ঘর’। বনের মধ্যে দিবালোকে তাঁরা খুঁজে ফিরবেন মৌচাক। এর থেকে আহরণ করবেন মধু।
মধু মৌসুম শেষ করে ৩০ জুন মৌয়ালরা ফিরে আসবেন লোকালয়ে নিজ বাড়িতে। আর ততদিন মৌয়ালদের সুস্বাস্থ্য কামনা করতেই থাকবেন পরিবারের সদস্যরা। মৌয়ালরাও সব সময় স্মরণে আনবেন বনবিবিকে।